প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের উপর চালানো হয় ঘুম নিয়ে গবেষণা। তিন মাস কারো যদি সঠিক মাত্রায় ঘুম না হয়। তাহলে অকাল মৃত্যু, হার্ট অ্যাটাক ও স্টোকের আশংকা দশগুণ বেড়ে যায়। সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ঠাণ্ডা লাগে বেশি, টিকার কার্যকারিতা কমে যায়।
আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি মস্তিষ্ক তখন তথ্য সংরক্ষণ করে। ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলে সব ঠিকঠাক করে যাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর শরীর আবার ঠিকমতো কাজ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে- দের ঘুম কম হয় তাদের মনোযোগ শট টাইম মেমোরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হতে পারে প্যানিক অ্যাটাক বা আতংকিত হওয়া, ফোবিয়া বা ভীতি, অকারণ অস্বস্তি যা ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা এমন কি আত্মহত্যা প্রবনতা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রশ্ন হল- আমরা কম ঘুমাই কেন? কেন কমে যাচ্ছে আমাদের ঘুমের সময়? প্রথমত গুরুতের অভাব ঘুমকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। সেই সাথে বেড়েছে আমাদের ব্যস্ততা আমাদের এখন দীর্ঘসময় কাজ করতে হয়। সকাল সকাল কাজের জন্য বের হতে হয় আবার ফিরতে ফিরতে দেড়ি হয়। আছে আমাদের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা, ঘুরাঘুরি, কেনাকাটা এবং প্রযুক্তি বিনোদন আর এইসব কিছু করতে গিয়ে যখন সময় টানাটানি পড়ে তখন আমরা ঘুমের সময়টার উপরই ভাগ বসাই তাহলে সমাধান কি? উত্তর দেওয়ার আগে জানতে হবে কতটা ঘুম একজন মানুষের দরকার তার সুস্বাস্থ্যের জন্য? এক কথায় উত্তর হচ্ছে ৬-৯ ঘণ্টা।
এবার এই সময়টাকে ঠিক রেখে আপনার বাকি কর্মঘণ্টাকে সাজান। নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যান নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠুন। ঘুমের সময় ভাগ বসাচ্ছে এমন সামাজিকতা, বিনোদনকে না বলুন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়াকার ঘুম নিয়ে গবেষণা করেছেন স্বাস্থ্যের ওপর ঘুমের প্রভাবকে তিনি এতটাই ইতিবাচক মনে করেন। যদি আপনার দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করার আগ্রহ থাকে তবে আপনাকে রাতে ভালো ঘুমের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
১. প্রতিদিন একই সময় বিছানায় যাওয়া ও বিছানা ছাড়া। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যেতে হবে আবার সকালে একটা নির্দিষ্ট সময় বিছানা ত্যাগ করতে হবে প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে ওঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দিন শেষে একটা নির্দিষ্টি সময় গিয়ে ঘুমভাব চলে আসবে।
২. প্রয়োজন অন্ধকার ঘুমের জন্য কিন্তু আধুনিক সভ্যতায় আপনি যেহেতু চাইলেও আলো বিছিন্ন হতে পারছেন না। তাই ঘুমের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে ঘরের বাতি কমিয়ে দিন। সেই সাথে টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল অর্থাৎ সবধরনের স্কিন থেকে লগ অফ করুন ব্লু লাইটের ক্ষতি ছাড়াও এসব ডিভাইসের মাধ্যমে আপনি যেসব খবর, বিনোদন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান ভালো ঘুমের পথে তা বাধা।
৩. খবর কম দেখুন, করোনাভাইরাস শুরুর পর লন্ডনের কিংস কলেজ একটা জরিপ চালায় এতে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই ঘুমের সমস্যার কথা বলছে সারাক্ষণ টেলিভিশন আর সোস্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত খবর আতংকের তথ্যগুলোই তাদের অশান্তির কারণ।
তাই আপনাকে অপ্রয়োজনীয় খবর দেখা সীমিত করতে হবে আধঘণ্টা বা পারলে তারও কম। সীমিত করতে হবে সিরিয়াল, ক্রাইম বা হরর সিরিজ দেখা। গবেষণায় দেখা গেছে ভিডিও কন্টেন্ট দেখার পরবর্তী আটঘণ্টা পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কে এর প্রভাব থাকে।
৪. কফি ও কোলা বর্জন করুন। কফি ও চিনিযুক্ত কোলা শরীরে উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। দেখা গেছে কফি পানের ৬ ঘণ্টা পরও রক্তে যে পরিমাণ থেকে যায় তা আধা গ্লাস এক্সপ্রেসো পানের সমান তাই কোলা বর্জন করুন অন্তত ঘুমানোর ৬ ঘণ্টা আগে কফি পান বন্ধ করুন। তার চেয়ে বরং বেশি বেশি পানি খান।
৫. বিছানা মানেই ঘুম, বিছানায় বসে যারা পড়ালেখা বা অন্যান্য কাজ করেন বিছানা মানেই ঘুম এই বার্তাটা তাদের মস্তিষ্কে কম যায়। ফলে দেখা যায় সহজে তাদের ঘুম আসে না তাই বিছানায় পড়ালেখা বা অন্যান্য কাজ না করাই উত্তম।
স্লিপ থেরাপিস্টরা বলেন, শোয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে যদি ঘুম না আসে তাহলে বিছানা ছেড়ে উঠে পরুন এবং অন্য কিছু করুন সেটা হতে পারে হাটাহাটি বা হালকা মেজাজের পড়া হতে পারে অর্থাৎ যতক্ষণ না আপনার শরীর ঘুমের জন্য তৈরি হচ্ছে।
৬. শরীরকে ক্লান্ত হতে দিন যারা হোম অফিস বা শিক্ষার্থীরা যারা ঘরে বসে আছেন বা বাহিরে বের হচ্ছেন কম তাদের বেশিরভাগেরই সময় কাটছে শুয়ে বসে ফলে তাদের শরীর ক্লান্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না আর শরীর ক্লান্ত না হলে ক্লান্ত ঘুম আসবে না। শারীরিক পরিশ্রম করার চেষ্টা করুন, অন্তত আধঘণ্টা বাহিরে সূর্যের আলোতে হাঁটুন, ইয়োগা বা ফ্রি ওয়ালকিং করুন তবে ঘুমানোর ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে নয়।
৭. কিছু খাবার ঘুমের জন্য সহায়ক পুষ্টিবিজ্ঞানীরা খাবারে এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন যা ঘুমের জন্য মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। যেমন- কাটবাদাম ও অন্যান্য বাদাম, কলা, দুধ, ওটমিল, ফ্যাটি ফিশ ইত্যাদি এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, সয়াবিন এসবকে বলা প্রি-বায়োটিক বা দেহের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার খাবার যাকে ঘুমের জন্য সহায়ক বলছে বিশেষজ্ঞরা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া