মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ৩০ আশ্বিন ১৪৩১
মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪
৫ আগস্ট ‘হারকিউলিস’ বিমানে যেভাবে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৪২ PM
কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা ও পরবর্তীতে ছাত্রজনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করে ভারতে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান তাঁকে ভারতের দিল্লিতে ভারতে পৌঁছে দেয়।

অবশেষে জানা গেল অবস্থান ও যাত্রাপথ গোপন রাখার স্বার্থে তাকে বহনকারী ফ্লাইট ‘এজেএক্স ১৪৩১’ (কোডনেম) বিমানটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রাখা হয়েছিল।

৫ আগস্টের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সামরিক হেলিকপ্টার থেকে নেমে কালো রংয়ের গাড়িতে উঠছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। প্রশ্ন উঠেছিল হেলিকপ্টার থেকে নেমে গাড়িতে উঠে কোথায় গেছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা? 
সেদিন গণভবন থেকে দ্রুতই সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে উঠে বসেন শেখ হাসিনা। সেই হেলিকপ্টারের গন্তব্য ছিল হযরত শাহজালাল আন্তজাতিক বিমানবন্দরের বঙ্গবন্ধু ঘাটির রানওয়েতে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ছিল মূলত এই রানওয়ের।  সামরিক হেলিকপ্টার থেকে নেমে কালো রংয়ের গাড়িতে উঠছেন দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। 

এসময় রানওয়েতে সবাই ছিল খুবই ব্যস্ত। তবে তাদের পরের গন্তব্য কোথায়, তা জানতেন না উপস্থিত কেউই। কালো গাড়িটিতে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পাশের রানওয়েতে রাখা বিমানবাহিনীর ট্রান্সপোর্ট উড়োজাহাজ সি-১৩০জে হারকিউলিসে চড়ে দেশত্যাগ করেন। 
বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি প্রথমে কলকাতার দিকে যায়। এরপর গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটির দিকে যাত্রা করে। বিমানটি প্রথমে কলকাতার দিকে যায়, কারণ এটি দ্রুত বাংলাদেশের আকাশসীমা ছাড়তে চেয়েছিল। 

ঢাকা-দিল্লির যে আকাশপথ রয়েছে সেটি দিয়ে গেলে বিমানটিকে রাজশাহীর উপর দিয়ে যেতে হতো। এতে করে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় বিমানটিকে আরও কয়েক মিনিট থাকতে হতো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে যাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিট আগে বিমানটি একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে। ওই সময়ই এটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে বিমানের অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি ও সয়ংক্রিয় জিওলোকেটরের তথ্য পাওয়া যায়। বিমানটি যখন পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন এটির ট্রান্সপন্ডারটি চালু করা হয়।

বিমানটির জিওলোকেটর চালু করা হয় ঢাকা-কলকাতা রুটের ‘বিইএমএকে’ ওয়ে পয়েন্টে পৌঁছানোর পর। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিমানটির কোড নাম্বার দেয় ১৪৩১। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে প্রতিটি বিমানকে চার সংখ্যার এমন আলাদা একটি কোড দেওয়া হয়। এই কোডটি হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ট্রান্সপন্ডারে ম্যানুয়ালি যুক্ত করেন ক্রুরা।
যদিও বিমানটি সেকেন্ডারি রাডারে দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু পাইলটরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কলকাতা অঞ্চলের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন।

শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের যাত্রাপথ এবং বাংলাদেশের ভেতরে এটির অবস্থান গোপন রাখতে বন্ধ রাখা হয় ট্রান্সপন্ডার।
বিমানটিকে প্রথম ২৪ হাজার ফুট উচ্চতায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। উড্ডয়নের পর শাহজালাল বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোলার হাসিনাকে বহনকারী বিমানের পাইলটকে একটি সতর্কতা বার্তাও পাঠান। এতে বলা হয়, একটি বিমান ঢাকার দিকে আসছে এবং এটি তাদের ঠিক উপরে আছে। বিমানটি ২৬ হাজার ফুট নিচে নেমে আসছে।

ইন্ডিয়া টুডের তথ্য অনুযায়ী, হাসিনার বিমানটি বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করার পরই এটিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা ঘাঁটিতে থাকা দুটি ড্যাসাল্ট রাফায়েল যুদ্ধবিমান এসকর্ট দেয়। শেখ হাসিনার বিমান ভারত সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় এটিকে অনুসরণ করা শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সাথে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য ইমিগ্রেশন করেননি। হাসিনার কাছে ওই সময় কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং রেহানার কাছে ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল।

সেদিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি হিন্দন ঘাঁটিতে অবতরণ করে। যা রাজধানী দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানটি হিন্দন ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর হাসিনাকে উত্তর প্রদেশের একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত