বিশ্বে নানা ভাষা রয়েছে, ভাষাভাষী জাতি রয়েছে। সভ্যতার পাশাপাশি সেই ভাষার বিবর্তন হয়েছে। এই বিবর্তনের মধ্য দিয়েই শতসহস্র ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। এই শতসহস্রের মধ্যে সব ভাষাই মায়ের ভাষা তথা মাতৃভাষা। একেকটি দেশের একেকটি মাতৃভাষা থাকে। আবার একটি দেশের মধ্যেও নানান জাতিগোষ্ঠী থাকে। এদের আবার রাষ্ট্রীয় ভাষা ছাড়াও আলাদা মাতৃভাষা থাকে। এরকম মাতৃভাষার সংখ্যা কত? যতটুকু জানা যাচ্ছে, পৃথিবীতে মাতৃভাষার সংখ্যা প্রায় সাত হাজার!
ভাষার সংখ্যা নিয়ে এ পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এসআইএলের (সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস) গবেষণাটিই সবচেয়ে বড় বলা যায়। ২০০৯ সালের এ গবেষণার ফল বলছে, পুরো বিশ্ব মিলিয়ে ভাষার সংখ্যা ছয় হাজার ৯০৯।
এই ছয় হাজার ৯০৯ ভাষার মধ্যে এমন একটি ভাষা রয়েছে যা বিশ্বের কেউই জানতেন না। শুধু একজন নারী জানতেন ভাষাটি। ওই নারীও অবশ্য এখন আর নেই। গত বুধবার ৯৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভাষাটিও পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘ভারতীয় গণমাধ্যম জি২৪ঘণ্টায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ক্রিস্টিনা ক্যাল্ডেরন। এক আদিবাসী নারী। তিনিই আয়ত্ব করেছিলেন ইয়ামানা নামে একটি ভাষা, যা ছিল ইয়াগান সম্প্রদায়ের। ২০০৩ সালে ক্রিস্টিনার বোনের মৃত্যুর পর তিনি ছিলেন বিশ্বের শেষ ব্যক্তি, যিনি এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে অভিধান তৈরি করেছিলেন ক্রিস্টিনা, যা স্প্যানিশসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিধান থাকলেও এই ভাষার কথা বলার লোক নেই।
ক্রিস্টিনার মেয়ে বলছেন, তার মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইয়ামানা ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। দক্ষিণ চিলির এই ভাষা একেবারেই অল্পশ্রুত। যদিও ইয়াগান সম্প্রদায়ের অনেকে বেঁচে আছেন এখনও। কিন্তু তারা কেউই মাতৃভাষায় কথা বলে না। তাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই ভাষায় কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে।