অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি চট্টগ্রাম। বিশ্বে এমন শহর খুব কমই আছে যেখানে একত্রে সবুজে ঘেরা পাহাড়, নদী আর সাগরের মেল বন্ধনের দেখা মেলে। প্রাচ্যের রানিখ্যাত চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে সুপরিচিত।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম নান্দনিক ও জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নান্দনিকভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে এই সমুদ্র সৈকতটির জনপ্রিয়তা পর্যটকদের কাছে দিন দিন বাড়ছে। কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিকেল এবং সুর্যাস্তের সময় অগণিত পর্যটকের ঢল নামে। এছাড়া, চট্টগ্রাম শহরের ফৌজদারহাটে অবস্থিত জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম কর্তৃক নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ‘ডিসি পার্ক’ ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এসব আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল গুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য নির্ভর করতে হয় গণপরিবহণ কিংবা উচ্চ ভাড়ায় চালিত পরিবহনের ওপর। ফলে দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা তো বটেই চট্টগ্রামের ভ্রমণ পিপাসুদের নানান ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
সমগ্র বিশ্বে পর্যটন একটি লাভজনক খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বে অনেক দেশ আছে যাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় ক্ষেত্রটি হলো পর্যটন খাত। বাংলাদেশের ভূপ্রাকৃতিগত অনন্য বৈশিষ্ট্য ও জীব বৈচিত্র্য দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ও অবকাঠামো ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে দেশের পর্যটনস্থলগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় দুই শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। এছাড়া বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এছাড়া পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২৩ লাখ মানুষ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৯০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে । আর বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোয়। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজারে টিকে থাকতে পারে, তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির রূপরেখা।
আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতন চট্টগ্রামে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বিশেষ ছাদ খোলা বাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং ফৌজহার হাটস্থ ডিসি পার্কের গমনাগমন নির্বিঘ্ন ও সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশনের সহযোগিতায় আগামী ১০ জুন থেকে টাইগার পাস-ডিসি পার্ক- পতেঙ্গা রুটে ২টি ডাবল ডেকার (একটি ছাদ খোলা) বাস সার্ভিস যাত্রা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে ১০ জুন সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দুপুর ১২টায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে এই পর্যটন বাস চলাচল সার্ভিসের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান এনডিসি, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার জনাব কৃষ্ণ পদ রায়, বিপিএম (বার) পিপিএম বার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
কোন রুটে, কয়টায় ছাড়বে পর্যটন বাস? জানা গেছে এই পর্যটন বাস ২টি চট্টগ্রাম শহরের টাইগারপাস থেকে যাত্রা শুরু করে ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাবে এবং পুনরায় একই রুটে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে ডিসি পার্ক হয়ে টাইগারপাস ফিরবে। সার্ভিসটি প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা, বিকাল ৩টা, বিকাল ৪টায় মোট ৩টি ট্রিপ পরিচালনা করবে। এছাড়া প্রতি শনিবার পরিচালনা করবে ৪টি ট্রিপ। ট্রিপগুলো যথাক্রমে সকাল ৯:৩০টা, সকাল ১০:৩০টা, বিকাল ৩টা ও বিকাল ৪টায় যাত্রা করবেঅ এছাড়া প্রতি রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন ২টি ট্রিপ যথাক্রমে বিকাল ৩টা ও বিকাল ৪টায় চট্টগ্রামের টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গার উদ্দেশ্য যাত্রা আরম্ভ করবে। শুক্রবার ৩টি ট্রিপ যথাক্রমে দুপুর ১২টা, সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৮টা; প্রতি শনিবার ৪টি ট্রিপ যথাক্রমে দুপুর ১টা, দুপুর ২টা, সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৮টায় পতেঙ্গা থেকে একই রুটে ফিরে আসবে।
পর্যটন বাসের ভাড়া কত? পর্যটন বাস সার্ভিসে ভ্রমণের জন্য টাইগার পাস থেকে ডিসি পার্ক পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা, ডিসি পার্ক থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ৩০ টাকা, টাইগার পাস থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ৭০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করবে। একইভাবে পতেঙ্গা হতে ডিসি পার্ক ৩০টাকা, ডিসি পার্ক হতে টাইগারপাস ৪০ টাকা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে টাইগারপাস ৭০ টাকা টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্রমণ প্রত্যাশীদের চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে পর্যটক বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বহরে এসি বাস যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে।
বাবু/জেএম