মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ৩০ আশ্বিন ১৪৩১
মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪
ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৩:৫৬ PM
বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) পরিচালনা পর্যদ বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠনের আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে সিকদার পরিবারের মধ্যেই বিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে পারভীন হক সিকদার আছেন একদিকে, অন্যদিকে তাঁর দুই ভাই রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার। ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে তাঁকে পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে– এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ ডিসেম্বর নির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আদালত। এর আগে একই শঙ্কা জানিয়ে এজিএম বন্ধের উদ্যোগ নিতে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লিখেছেন তিনি।

ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর পর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তাদের মেয়ে পারভীন হক সিকদার, ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকটির পরিচালক। ৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার ইন্স্যুরেন্সের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান। সব মিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এজিএম আয়োজনের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিতে হয়। গত ৩০ এপ্রিলের পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে ২০২২ হিসাব বছরের ওপর প্রথমে এজিএমের তারিখ ঘোষণা করা হয় গত ১৭ আগস্ট। অনিবার্য কারণে গত ২৫ জুলাই তা স্থগিত করা হয়। এর পর গত ১ অক্টোবরের পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ২১ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এজিএম আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় ৪০তম এজিএম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এজিএমের ওপর আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন চেম্বার আদালত। ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গতকাল এ আদেশ দেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। 

আদালতে যাওয়ার বিষয়ে পারভীন হক সিকদার টেলিফোনে সমকালকে জানিয়েছিলেন, এখানে অনেক অনিয়ম চলছে। এজিএমের তারিখ বা এজেন্ডা নিয়ে পর্ষদ থেকে কিছু অনুমোদন করা হয়নি। কীভাবে এসব হচ্ছে তা স্বাধীন কোনো পক্ষ পর্যবেক্ষণ করছে না। সুতরাং, এটা সন্দেহজনক কার্যক্রম। গত বছরের এজিএমে অনেক কিছু ঘটেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম না মেনে এজিএম আয়োজনের পেছনে আছে তাঁর দুই ভাই। এখন তিনি কোনো পদক্ষেপ না নিলে মনে হবে এই অনিয়মে তিনিও তাদের সঙ্গে যুক্ত। কোনো বিকল্প না থাকায় তিনি আদালতে গেছেন। 

বিএসইসিতে দেওয়া আবেদনে যা আছে
এজিএম মুলতবির আবেদন জানিয়ে এর আগে ১৭ ডিসেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লেখেন পারভীন হক সিকদার। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ৬ ডিসেম্বর ব্যাংকের কোম্পানি সচিবের মাধ্যমে ২১ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এজিএম আয়োজনের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। যদিও এজিএমের এজেন্ডা পরিচালনা পর্ষদ থেকে অনুমোদন হয়নি। এর আগে গত বছর ৩৯তম এজিএমে কোম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী (প্রতি বছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক পদত্যাগের বাধ্যবাধকতা) উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, মাবরুর হোসেন ও রন হক সিকদার পদত্যাগ করেন। তবে পাতানো ভোটের মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাবরুর হোসেনকে বাদ দেওয়া হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রন হক সিকদারকে পুনর্নির্বাচিত দেখানো হয়। এবার এজিএম সামনে রেখে একই পরিকল্পনা হচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন।

চিঠিতে দুই ভাইয়ের নাম উল্লেখ না করে আরও বলেন, কতিপয় পরিচালক অনলাইনে পাতানো ভোটাভুটির মাধ্যমে একাধিক পরিচালককে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, প্রহসনমূলক ভোটের মাধ্যমে একই প্রক্রিয়ায় পরিচালক পদ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে। অতএব, কিছু পরিচালকের পুনর্নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার জন্য ৪০তম এজিএমে বিএসইসির সরাসরি তত্ত্বাবধানে আয়োজনের নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, যেখানে একক পরিবার, ব্যক্তি বা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারে। তবে এনবিএলে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সীমার অতিরিক্ত শেয়ার তিন মাসের মধ্যে বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে গত ১৩ জুলাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা না করায় আইনের ১৪ক(৫) ধারায় সরকারের অনুকূলে কেন অতিরিক্ত শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে না, তা  ১৪ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২১ নভেম্বর চিঠি দেওয়া হয়েছে। 
 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত