বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত সপ্তাহে ভারতে চলে যাওয়ার আগে পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। শনিবার (৫ আগস্ট) ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময় তিনি পাননি।’
জয় বলেন, ‘আমার মা দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়ে তারপর পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ সময়ে আন্দোলকারীরা গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেয়। তিনি ব্যাগ গোছানোর সময়টুকুও পাননি। আমি যতদূর জানি, সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
জয় আরও বলেন, ‘যদিও রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধান ও বিরোধী রাজনীতিকদের সাথে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।’
আওয়ামীলীগ আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কিনা জানতে চাইলে জয় রয়টার্সকে বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। না হলে আমরা বিরোধী দল হব। যেভাবেই হোক ভালো।’
জয় জানান, তিনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যে খুশি হয়েছেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর খালেদা জিয়া তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কোনো প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসা না করার আহ্বান জানান।
জয় বলেন, ‘আমি বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতি শুনে খুব খুশি হয়েছি। আসুন আমরা অতীতকে ভুলে যাই। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। ঐক্যবদ্ধ সরকার হোক বা না হোক, আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।’
জয় আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করতে আমি বিএনপিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি, অসম্মতিতে একমত হতে পারি এবং সবসময় একটি সমঝোতা পথ খুঁজে পেতে পারি।’
তিনি আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এই মেয়াদ শেষে এমনিতেই আমার মা রাজনীতি থেকে অবসরে যেতেন। যদি দল আমাকে চায়, আমি অবশ্যই বিবেচনা করব।’
রয়টার্সের দেওয়া তথ্যমতে, আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০ জনের মতো। সেজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ছাত্ররা। এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘গ্রেপ্তারের হুমকিতে আমার মা আগেও কখনো ভয় পাননি। আমার মা ভুল কিছু করেননি। শুধু তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছেন, এর মানে এই নয় যে, আমার মায়ের নির্দেশেই কাজগুলো করেছেন তারা। এর মানে এই নয় যে, আমার মা এসবের জন্য দায়ী। যারা এর জন্য দায়ী, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করার জন্য আমার মা কাউকে আদেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা ঠেকানোর চেষ্টা করে গেছে কিন্তু কিছু পুলিশ অফিসার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছেন।’
দেশে ফেরা প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমি বেআইনি কিছু করিনি, তাহলে (দেশে আসার জন্য) কেউ আমাকে আটকাবে কী করে? আওয়ামী লীগ কোথাও যাচ্ছে না। কেউ আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। আমাদের সাহায্য ও সমর্থকদের ছাড়া বাংলাদেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি আসবে না।’
জয় বলেন, ‘আমাদের সরকার অবিলম্বে চেয়েছে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং আমি সেই আলাপের অংশ ছিলাম। আমি আমার মাকে বলেছি, ছাত্রলীগকে অবিলম্বে বলা উচিত আক্রমণ না করতে। আমরা সেই পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করেছি, যে ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আমাদের যা যা করা সম্ভব, আমরা করেছি।’