রবিবার ২২ জুন ২০২৫ ৮ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ২২ জুন ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪, ৯:১২ PM
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে ছাত্রজনতা হত্যার দায়ে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের সহ ১০ জনকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে এ অভিযোগটি গ্রহণ করেছে তদন্ত সংস্থা।

আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের কো-অর্ডিনেটর বরাবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম এ আবেদন করেন।

আবেদনে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সারা বাংলাদেশে নিহত এবং এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতদের বিষয়ে অভিযোগটি কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার ভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪ (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, ১ থেকে ৯ নং আসামীদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামীরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত ছাত্রজনতাদের হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দ্যেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এ অভিযোগে সাবেক সেতুমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ২ নম্বর আসামি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে তিন নম্বর সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে চার নম্বর আসামি, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী আরাফাত ও তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে পাঁচ নম্বর আসামি।

এছাড়াও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ছয় নম্বর আসামি, অতিরিক্ত আই জি পি ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন আর রশিদকে সাত নম্বর আসামি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে আট নম্বর আসামি, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন আর রশিদ এবং কতিপয় অসাধু র‍্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কতিপয় অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী নেতাকর্মীকে ৯ নম্বর আসামি এবং সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

প্রমাণ হিসেবে ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে প্রকাশিত প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বিবিসি বাংলা, দি ডেইলি স্টার বাংলা, আজকের পত্রিকা, দৈনিক ইনকিলাব, আনন্দ বাজার পত্রিকা, বাংলা পত্রিকা, আমাদের সময় ডট কমসহ অন্যান্য পত্রিকার কপি এবং শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের জন্ম সনদ, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ও মৃত্যু সনদ সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাদির এনআইডি কার্ড ও ওকালাতনামাও যুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগের আবেদনে বলা হয়, এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করছি যে,গত ১ জুন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রজনতা কর্তৃক সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সমগ্র বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। উক্ত আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে দেশব্যাপী ছাত্রজনতা কর্তৃক অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ কর্মসূচি, অবরোধ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়। উক্ত কর্মসূচি থেকে সরকারের প্রতি কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতি সংস্কারের জোর দাবি জানানো হয়। 

আন্দোলনকারী ছাত্র জনতাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আসামি শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারী ছাত্র জনতাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার নির্দেশনা প্রদান করেন, যা বিভিন্ন দেশী ও বিদেশি পত্র পত্রিকা ও টিভি নিউজ এ প্রকাশিত হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি সাবেক সেতুমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য একই উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য ও নির্দেশনা প্রদান করেন। আসামি ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্র জনতাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তিনি আরও বলেন, কারফিউ চলাকালে দেখা মাত্র গুলি করা হবে। (বিবিসি বাংলা ২০/০৭/২০২৪ তারিখ এর অনলাইন রিপোর্ট)

আরও বলা হয়, আসামি শেখ হাসিনা, আসামি ওবায়দুল কাদের ও অন্যান্য আসামিদের এহেন নির্দেশনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার তারিখে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর আগ্নেয় ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে এবং তাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে এবং কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করে। 

কোটা সংস্কারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রজনতা কর্তৃক দেশব্যাপী কমপ্লিট শাট ডাউনের ডাক দেয়া হয়। এই আহবানে সাড়া দিয়ে দেশব্যাপী সাধারণ ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসে।

এসময় আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার লক্ষ্যে উক্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ১-৭ নং আসামির প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় অন্যান্য আসামিরা সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্রজনতার উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এতে ১৬ ‍জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। একই দিনে আরো পাঁচজনকে আসামি কতিপয় পুলিশ সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।

পরবর্তীতে, গত ১৮ জুলাই ৪২ জন, ১৯ তারিখে ৮৬ জন, ২০ তারিখে ৩৮ জন, ২১ জুলাই থেকে ০৩ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫ জন, ০৪ আগস্ট ১১৪ জন এবং ০৫ আগস্ট ১০৮ জনসহ কমপক্ষে ৪৩৯ জন আন্দোলনরত ছাত্র জনতাদের আসামি পুলিশ/র‍্যাব সদস্য ও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্তৃক গুলি করে ও কুপিয়ে গণহত্যা করা হয়। এরপর ০৫ আগস্ট তারিখে ছাত্রজনতার অসহযোগ গণআন্দোলনের মুখে ১ নং আসামি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টার যোগে পালিয়ে যায়। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে অনেকেই আত্মগোপনে চলে যায়।

এমনকি গত ০৫ আগস্ট ঢাকার সাভারস্থ ডেইরি ফার্ম হাইস্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র আরিফ আহমেদ সিয়াম আন্দোলনরত অবস্থায় আন্দোলনকারী ছাত্র হওয়ার কারণে আসামিদের নির্দেশে পুলিশ সদস্য কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে ০৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। 

একইভাবে ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানে আসামি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের কতিপয় মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কতিপয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য, কতিপয় র‍্যাব কর্মকর্তা ও র‍্যাব সদস্য, কতিপয় অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মী কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্রজনতাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দ্যেশ্যে তাদের উপর দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে কমপক্ষে ৪৩৯ জন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হত্যা করা হয়।

আন্দোলন চলাকালীন কমপক্ষে ১০ হাজার ছাত্রজনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হয় এবং এক হাজার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে চিরতরে অন্ধ ও পঙ্গুত্ব বরণ করে। কয়েক হাজার ছাত্র জনতা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উক্ত ঘটনায় আসামি কর্তৃক আন্দোলনরত ছাত্রজনতা সহ কমপক্ষে ৩২ জন শিশু হত্যার শিকার হয়। আন্দোলনরত জনতাকে নির্মূল করতে আসামি র‍্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে গণহত্যা করে।

৪ ও৫ নং আসামিদ্বয় অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যা চালায়, হত্যাযজ্ঞের সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় যাতে করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য গোপন রাখা যায় ও গুজব ছড়ানোর যায়। আসামিরা দেশের সকল ইলেকট্রনিক/প্রিন্ট মিডিয়া জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে গণহত্যার তথ্য জানতে বাধাগ্রস্ত করে।

অভিযোগে উল্লেখিত ৭ নং আসামি অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে গণহত্যার উদ্দেশ্যে আন্দোলনরত ৭ জন সমন্বায়ক ছাত্রনেতাসহ অনেককে বেআইনিভাবে ডিবি কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আটক করে রেখে তাদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।

১ থেকে ৯ নং আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় সারা দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলায় সাড়ে ৪ লাখ আন্দোলনরত ছাত্রজনতাকে আসামি করে, তার মধ্যে ১২ হাজার আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে কারাগারে রেখে তাদের মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত