সরকারে পতনের পর গ্রেফতার রথী-মহারথীরা নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত। ডিবি পুলিশের রিমান্ডে তারা দিচ্ছেন চাঞ্চল্যকর নানা তথ্যও। সবচেয়ে বেশি জেরার মুখে আছেন সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক দটুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
পলক ডিবিকে জানিয়েছেন, আন্দোলনের শেষের দিকে ছাত্রদের পক্ষে কথা বলায় পলককে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর চাপের কারণেই টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে ৫০০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করা হয়। টুকু জানান, মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন।
রিমান্ডে থাকা আসামি সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার পতনের একদফা অন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ৪ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, প্রয়োজনে আমাকে বলি দিন। তারপর শিক্ষার্থীদের অন্দোলন বন্ধ করুন।
পলক আরও বলেন, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলি- আপনি শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। এ সময় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাকে তেড়ে মারতে আসেন। তখন আমি সাহসী হয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনি স্টেপ ডাউন করুন। আওয়ামী লীগকে মানুষ ঘৃণা করছে, থুতু দিচ্ছে। এরপর ওবায়দুল কাদের ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গণভবন থেকে বের করে দেয়।
পলক ডিবিকে জানান, স্মার্ট বাংলাদেশে গঠনে টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদি সরকারের যে ৫০০ কোটি টাকার চুক্তি ছিল সেটা আমি বাতিল করতে চাইনি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জোর করে ওই চুক্তি বাতিল করায়। কারণ, ওই স্কুলের অন্যতম কর্ণধার আইমান সাদিক অন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তারা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছিলেন।
গ্রেফতাকৃতরা রিমান্ডে জানিয়েছেন, দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই দায়ী। কারণ তিনি আমাদের কারও কথা শুনতেন না।
এসময় ডিবি কর্মকর্তা পালটা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আপনারা যারা উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও নেতা ছিলেন তারা শেখ হাসিনাকে বোঝাতে পারেননি। আপনারা যদি সবাই শেখ হাসিনাকে সঠিক বার্তা দিতেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই বুঝতেন। তারপরও আপনাদের কথা না শুনলে আপনারা কয়েকজন পদত্যাগ করতেন।
ডিবি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারকৃতরা বলেন, আপনারা জানেন না শেখ হাসিনা কত বড় একরোখা মানুষ। তখন ডিবির প্রশ্ন- ‘আপনারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি। নিজেদের বিবেকের কাছ কী দায় এড়াতে পারবেন? এ সময় তারা না-সূচক জবাব দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পলক বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি মানতে রাজি হচ্ছিলেন না। এসময় সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যদি সত্যিই দেশের স্থিতিশীলতা চাইতেন তাহলে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে পলক আর কোনো উত্তর দিতে পারেননি।