মীরসরাইয়ে গণপিটুনিতে মো. রফিক উদ্দিন (৪৫) নামে এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।
একই সময়ে বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীদের বহন করা তিনটি অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেন স্থানীয় লোকজন। শনিবার (৩১ আগস্ট) রাত দেড়টায় মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল জোন-২ এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা গিয়ে কারখানার ভেতর থেকে লাশ ও আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রফিক উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের কাজীর তালুক এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে। সাবেক এই ইউপি সদস্য সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
গণপিটুনির ঘটনায় আহতরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (২১), নুরুল করিম (২৮), সাইদুল (২২), আবদুর রহিম (২৬), নুরুজ্জামান (২৭), আবু তালিব (৩২), শহীদুল ইসলাম (৪৫), জহির (১৭), শহিদুল ইসলাম (২৮), আকবর হোসেন রনি (২২)। তাদের সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
উপজেলা শ্রমিকদলের ১৬নং শাহেরখালী ইউনিয়ন সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি ছিল বিএনপি শাহেরখালী ইউনিয়নের। আমরা প্যাকেট করার সময় রাতে বিএনপি নেতা রফিক উদ্দিনের নম্বরে একজন কল দিয়ে জানান, সাহেরখালী ইউনিয়নের স্লুইস গেট এলাকায় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে; নেবে কিনা।
পরে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। সেখান থেকে ফেরার সময় অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার সামনে এলে তাদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে ঘিরে ফেলেন কারখানার লোকজন ও স্থানীয়রা। এ সময় তারা রফিক মেম্বারসহ তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের গণধোলাই দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি রাতে রফিক মেম্বারের নম্বরে ফোন দিলে অপরিচিত এক ব্যক্তি রিসিভ করেন। আমি রফিক মেম্বারের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, জঙ্গলে আছেন। তুমি কে; বলে কল কেটে দেন। পরে বিষয়টি মীরসরাই থাকা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে জানাই। সেনাবাহিনী রাতে না যাওয়াতে রবিবার সকাল ৮টায় আবার কল দেই।
প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার ভেতর যাই। এ সময় রফিক উদ্দিন হাত-পা, চোখ বাঁধা ও মৃত অবস্থায় এবং অন্য নেতাকর্মীদের গুরুতর জখম অবস্থায় পাই। এরপর তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। রফিকসহ আহতদেরকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়েছে। তাদের বহনকারী তিনটি সিএনজি-অটোরিকশাও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দাবি করেন, শনিবার রাত দেড়টায় দূরের একটি মৎস্য প্রকল্পে হানা দিয়ে ফেরার পথে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ১৪-১৫ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা অ্যালার্ম বাজায়। এতে আশপাশের কারখানার লোকজন ও রাতে খালে মাছ ধরতে আসা মানুষ তাদের ধাওয়া দিয়ে গণধোলাই দেয়।
এসময় উত্তেজিত জনতা ডাকাতদের ব্যবহার করা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেয়। পরে আহত লোকজনকে উদ্ধার করে আমরা কারখানার ভেতরে রাখি। রবিবার সকাল সাড়ে ১২টার দিকে আহতদের স্বজনরা কারখানায় ঢুকে তাদের নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন।