শেখ হাসিনা ভারত থেকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বিচারের মুখোমুখি করতে হাসিনাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতকে।
এছাড়া হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুব একটা সুখের সম্পর্ক তৈরি হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা, সে প্রশ্নেও কথা বলেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।
ঢাকায় নিজের বাসভবনে দ্য হিন্দুর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. ইউনূস ভারতের সাথে সম্পর্ক এবং সংস্কারের পরিকল্পনার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি তার সরকার গঠনের ১০০ দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন এবং উগ্রপন্থার উত্থান ও হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে “প্রোপাগান্ডা” বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি ইস্যুতে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করছি, তবে আমি বলব না যে আমরা এখনই “এ” গ্রেড পেয়েছি। অন্য ইস্যুতে বলব— অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন “এ-প্লাস” কারণ আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি পেয়েছিলাম। সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। দেশে উন্মত্ত ব্যাংকিং সিস্টেম ছিল। খারাপ ঋণ ছিল, ৬০ শতাংশ অশোধিত ঋণ। বহু ব্যাংক একে অপরের সাথে কীভাবে লেনদেন করতে হয়, গ্রাহকদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়— ইত্যাদি জানেই না। আমাদের প্রায় অকার্যকর একটি আর্থিক ব্যবস্থা ছিল। তাই সেখান থেকে, আমরা ব্যাংকিং সিস্টেমকে আবার কার্যকর করে এই পর্যায়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, যদিও অবস্থা এখনও নিখুঁত নয়, তবে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম ছিল, কিন্তু এখন গত ১০০ দিন ধরে মাসে মাসে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এটি আমাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করেছে। আমরা মুদ্রাস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি, আমরা প্রচুর পরিমাণে বৈশ্বিক সমর্থন পেয়েছি— আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সাথে ব্যবসা করছে, আমাদের আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে যাতে বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করা যায় ইত্যাদি। আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৈঠকের অবসরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানসহ অনেক সরকারপ্রধানের সাথে দেখা করেছিলাম এবং আরও অনেকের সাথে কথা হয়েছে যারা আমাদের আর্থিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের এমন কর্মকর্তারা আছেন যারা বিনিয়োগকারীদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে প্রস্তুত যাতে তারা বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা না পড়েন, ওয়ান-স্টপ পরিষেবা আছে যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের কাজগুলো করতে পারেন। তাই আমি বলব— দেশ খুবই ইতিবাচক পথে এগুচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া এবং তিনি বাংলাদেশের সমালোচনা করে অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়েছেন দাবি করে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সাথে আন্তর্জাতিক সমর্থনও অব্যাহত থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমার মনে হয় না ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন।