‘যারা টিউশনি করে চলতো এখন তারা কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৫:৫৬ PM
“যারা একাত্তর মানে না, যারা বায়ান্ন মানে না- তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও মানে না,” বলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
তিনি বলেছেন, “একজন ছাত্র ৫ অগাস্টের আগে যারা হলে থাকতো, যারা টিউশনি করতো- তারা হঠাৎ করেই এতো টাকার মালিক হয়ে গেলেন। তিন-চার-পাঁচ কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন; আগে পিছে আট-দশটা-বিশটা কোটি টাকার গাড়ি থাকে- তাদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকে...এই যে একটা অশনিসংকেত জাতির জন্য।
“এর থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব জাতিকে মুক্তি দেবেন- এটাই আমাদের দাবি।”
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এনসিপির আত্মপ্রকাশে প্রশাসনকে ব্যবহারের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা সারা দেশ থেকে লোকজন আনা হয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা বুলু।
“এই দলটি যেদিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সমাবেশ হয়, মনে হয় যেন একটা রাজকীয় সংবর্ধনা হচ্ছে।
কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলের এমনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে নাই।
“সকল ডিসিদেরকে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে অসংখ্য গাড়ির ব্যবস্থা করে মানুষ ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল- কোটি কোটি টাকার খরচ করা হয়েছে; এটা কীভাবে… প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।”
লোকজন দলটিকে ‘কিংস পার্টি’ বলছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি- আপনার (মুহাম্মদ ইউনূস) সরকারের উপদেষ্টা ছিল, তারা সেখানে (ক্ষমতায়) থেকে রাজনৈতিক দল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।
“অনেকে বলেছিলেন- আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) নেতৃত্বে নাকি কিংস পার্টি হচ্ছে। পরে একজন উপদেষ্টা সরকার থেকে বেরিয়ে আসলেন, এসে দল গঠন করলেন।”
জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, জামায়াতে ইসলাম ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সাথে একসাথে থেকে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৫ দিন হরতাল পালন করেছিল এবং সেদিন তারা আওয়ামী লীগের সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছিল।
“সেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশনেত্রী সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন জনগণের কল্যাণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য।”
তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের পর আমরা কী দেখলাম? জামায়াতের আমির তিনি একসময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন, উনি হঠাৎ বলে দিলেন, দেশে যা ঘটেছে যারা যে অন্যায় করেছেন- আমরা সবাইকে মাফ করে দিলাম।
“আপনি মাফ করে দেওয়ার কে? জামায়াতের এসব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।”
রাজনীতিক মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ছেচল্লিশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভা হয়। মশিউর রহমান যাদু মিয়া মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
‘একাত্তর বাংলাদেশের ভিত্তি’
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “রাজনীতিতে এই ছাত্রশিবিরের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে ছিলেন, আত্মগোপন থেকে তারা আত্মপ্রকাশ করলেন। বৈষম্যবিরোধীরা যারা নতুন দল গঠন করলেন, তারা হঠাৎ করে বক্তব্য দিয়ে বসলেন, আমরা সাতচল্লিশের পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে চাই, আমরা একাত্তর মানি না।
“যারা একাত্তর মানে না, যারা বায়ান্ন মানে না- তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও মানে না।”
তিনি বলেন, “একাত্তর হলো আমাদের স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ, আমাদের ভিত্তি; একাত্তর হলো ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। অতএব একাত্তর যারা মানে- আমি মনে করি, তাদের এদেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার অধিকার নাই এবং ভোটে প্রার্থী হওয়ারও যোগ্যতা নাই, অধিকারও নাই।
“আমি মনে করি, শহীদ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ হয়েছে, এই গণতন্ত্রের জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে- অন্য কারণে হয় নাই।”
‘ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন’
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “এভাবে দেশ চলতে পারে না। প্রতিদিন কী ঘটছে? আপনারা দেখছেন। দেশে মব জাস্টিসের নামে যেকোনো মানুষের বাড়িতে হামলা হচ্ছে, যেকোনো মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন হচ্ছে, যেকোনো মানুষ যেকোনো জায়গায় খুন হচ্ছে, মারা যাচ্ছে…আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতো অবনতি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে, দেশে বিনিয়োগ আসছে না।
“এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে দেশে এখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার দরকার, নির্বাচিত সরকার দরকার।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এতো সব কাজ করার ম্যান্ডেট নেই। তাই তাদের উচিত- অতি দ্রুত ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে আছে।
“আমি বলতে চাই যত দ্রুত নির্বাচন দেবেন- তত দ্রুত দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।”
ভাসানী স্মৃতি সংসদের সভাপতি জিয়াউল হক মিলুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক নাদিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কৃষক দলের তকদীর হোসেন, মো. জসিম, ভাসানী স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ন্যান্সি রহমান।