আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার মধ্যেও কৃষকদের হাতে সার পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় হবে ১৫৮ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ টাকা। এর আগে দুই লটে ৬০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। ফলে, ৬ টাকা দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৬ লাখ মেট্রিক টন এবং নিরাপত্তা মজুত কমপক্ষে ৮ লাখ মেট্রিক টনসহ মোট ৩৪ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করে। ওই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিআইসি’র প্রণীত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক সংগ্রহ পরিকল্পনা শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ফার্ম ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং আপদকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অপশনাল ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনসহ মোট ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সৌদি আরবের সঙ্গে জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ২০০৭ সালে থেকে ইউরিয়া সার আমদানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। গত ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের সংগ্রহ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ৩৪ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে গত ১ জুলাই পর্যন্ত মজুত ছিল ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন, সম্ভাব্য উৎপাদন ১০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে ঘাটতি রয়েছে ১৭ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে ১৭ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। পরিকল্পনার আওতায় কাতার থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, সৌদি আরব থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের দাম পড়বে ৫৬০ দশমিক ৮৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বিসিআইসি প্রত্যয়ন করেছে। চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরবের সরকারি প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়ার দর এফওবি আল জুবাইল বন্দর থেকে ৫৬০ দশমিক ৮৩ ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মোট দাম এক কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলারের সমতুল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫৮ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ টাকা।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে খুব শিগগিরই দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদাও বাড়বে। এ অবস্থায় সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সার দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
-বাবু/নুর