ইংরেজ আমলে এই জেলায় যেসব ‘নীল খামার’ গড়ে উঠেছিল তাকে কেন্দ্র করেই প্রথমে নীলখামারী এবং পরবর্তিতে অপভ্রংশ হয়ে নীলফামারী নামকরণ হয়ে যায়। এ জেলার উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে রংপুর, পূর্বে লালমনিরহাট ও পশ্চিমে পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর। নীলফামারী প্রধানত কৃষির উপর নির্ভরশীল। ১৫ লাখ ৭১ হাজার জনসংখ্য অধ্যূষিত নীলফামারী জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসন মোট ৪ টি।   

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) : নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-১ আসন। এ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বাবুল, সুপ্রিমকোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সরকার ফারহানা আখতার সুমি, ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার ইমরান কবির চৌধুরী জনি। বিএনপির সম্ভ্যাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন খালেদা জিয়ার আপন ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় দেশের বাইরে পলাতক রয়েছেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে না পারলেও তার বাবা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের আর এক শরীক জামিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এ আসন থেকে জোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পাটির সম্ভ্যাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য ও নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। প্রসঙ্গত, ডোমার-ডিমলা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪২৮৮৪১ এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২১৭০৬৬ ও মহিলা ২১১৭৭২ এবং হিজরা ০৩ জন।

নীলফামারী-২ (সদর) : নীলফামারী সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও নীলফামারী পৌরসভা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-২ আসন। এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৩০ জন ও মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৭৭ জন। এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে। সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৪ বার নির্বাচিত হয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এলাকায় আসাদুজ্জামান নূরের বিকল্প কারো নাম শোনা না গেলেও তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিতে দলের ভিতর অনেকেই লুকিয়ে আছেন আড়ালে অন্তরালে। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনিই আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি-জামায়াত জোট, মাঠপর্যায়ে বিএনপির ভোট থাকলেও চরম নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি এখনও কোনো প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে পরেনি। বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল আলম ও ছাত্রদল থেকে উঠে আসা পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুবর রহমান এর নাম শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায়। সর্বোপরি প্রতীকবিহীন জামায়াতের উপর বিমুখ বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে নীলফামারীর সাধারণ ভোটারা চাইছে আসাদুজ্জামান নূরের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নীল সাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব লেলিনকে। 

অপরদিকে জামায়াত ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর মনিরুজ্জামান মন্টু অনেকটা নীরবেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। জোটের হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে তিনি কচ্ছপের মত আবারো এগুচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা। জাতীয় পার্টির অবস্থাও নাজুক। দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে তাদেও কোনো হাঁক-ডাক এখনও নেই।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ) : নীলফামারীর জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে নীলফামারী-৩ আসন। নীলফামারী-৩ আসনের ভোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৪৭ জন ও মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৪৬ জন, হিজরা ১ জন। এ আসনে দুইবার জামায়াতে ইসলাম এবং দুইবার জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ এক বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মেজর রানা মোহম্মদ সোহেল (অব.) এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়াও জাতীয় পার্টির কাজী ফারুক কাদের, আওয়ামী লীগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু মনোনয়ন চাইতে পারেন। বিএনপির পক্ষে ফাহমিদ ফয়সাল কমেট নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এখন থেকেই।  দুইবারের নির্বাচিত জলঢাকা উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান শিল্পপতি সৈয়দ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মাঠে নেমেছেন। আগামী নির্বাচনেও এ আসনটি দখলে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাসহ একাধিক প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন এলাকা।

নীলফামারী-৪ ( সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জের আংশিক) : নীলফামারী জেলার (সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার আংশিক) নিয়ে নীলফামারী-৪ আসন গঠিত। নীলফামারী-৪ আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ১৪ হাজার ২০৪ জন ও মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ১১ হাজার ৬৪৬ জন।  এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার টানা পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র দেওয়ান কামাল আহম্মেদ,   সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আমেনা কোহিনুর আলম, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবুল। সৈয়দপুর বিএনপি সভাপতি মো. শওকত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস ইসলাম মনোনয়নপ্রত্যাশী। সৈয়দপুর থেকে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য আদেলুর রহমান আদেল আগামীতে ও সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী আবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাফর ইকবাল সিদ্দিকীর আগে নীলফামারী-১ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন।