জামালপুর জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বর্তমানে সবকটিই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। দেশ স্বাধীনের পর দুয়েকবার বিচ্ছিন্নভাবে অন্য রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ নির্বাচিত হলেও বেশির ভাগ সময় ৫টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। জয়ের এ ধারা ধরে রাখতে দ্বাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মাঠ গোছাতে ব্যস্ত জাতীয় পার্টিও।

এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। তিনি এখান থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুর মোহাম্মদ। তিনি এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইসতিয়াক হোসেন দিদার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার।

এই আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হলেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এচাড়াও রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের  ছেলে ব্যারিস্টার শাহাদাত বিন জামান শোভন ও মহিলা দল নেত্রী সাহিদা আক্তার রিতা।

জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এম এ সাত্তারসহ আরো দুয়েকজন জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারেন। দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের বকশীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা আবদুল মজিদ।

এই আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল এ আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও মাঠে রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বও সেক্টর কমান্ডার ‘কে ফোর্স’-এর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল (অব.) খালেদ মোশাররফের মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম হুসনে আরা, বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সদ্যসাবেক সভাপতি শাহজাহান আলী মন্ডল ও ডা. খোরশেদুজ্জামান মিশ্রি মিয়া কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি সাবেক ছাত্রনেতা এস এম শাহিনুজ্জামান শাহীন।

এ আসনের উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। এছাড়াও এ আসনে জেলা বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক উপজেলা  চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন বিএসসি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনে বড় ফ্যাক্টর জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ। নির্বাচনী এলাকায় জাপা নেতা মোস্তফা আল মাহমুদ ব্যাপক জনপ্রিয়।

এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের  আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য মির্জা আজম। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এই আসনে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন মেলান্দহ উপজেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল।

এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাও। দলের শক্তিশালী এই প্রার্থী নির্বাচনী এলাকার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন বাদশা। ওয়ার্ড ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু বাদশা জেলা ছাত্রলীগের দুঃসময়ের সভাপতি ছিলেন। তিনি সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ২২ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময় বিএনপির জামায়াত জোট সরকারের রোষানলে পড়ে একাধিকবার জেলহাজতে গেছেন। টানা দ্বিতীয়বারে সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

এছাড়াও এই আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের পানিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক এমএনএ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আব্দুল মালেকের পুত্র প্রকৌশলী হেলাল মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ।

এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জামালপুর জেলা বিএনপি সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম। তিনি বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা। জাতীয় পাটির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও মোখলেছুর রহমান।

এ আসনে মনোনয়প্রত্যাশী সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার  মোজাফ্ফর হোসেন সিআইপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজনু সিআইপি। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরার পুত্র মুহাম্মদ সালেহীন রেজা এবং জেলা সহ-সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জামালপুর সদরে বিএনপির একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তারা হলেন জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, মহিলা দল নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মণি।

জাতীয় পার্টি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খান। দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের ডা. ইউনুছ আলী।