* মার্কিন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা
* কংগ্রেসম্যানদের চিঠি
* বিএনপির লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ
* প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে চীনের সমর্থন
* যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ‘ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
* দেশে এখন সরকার হটানোর চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে : ওবায়দুল কাদের
* নির্বাচন এলেই বিএনপি-জামায়াত বাম-ডান দল সক্রিয় হয়ে ওঠে : সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
* নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্রকারীরা এক হয়ে যায় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ততই দৃশ্যমান হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ ও সতর্কবার্তাও। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য বিএনপি ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্মও নিযুক্ত করেছে। মার্কিন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা, আমেরিকান ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি, এর প্রতিবাদে ১৯২ আমেরিকান বাংলাদেশীর প্রতিবাদ, ইউরোপের পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠি এবং এসব বিষয়ে চীনের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশে-বিদেশে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে, আমেরিকা ভিসা না দিলে আমরা যাব না সে দেশে। বিশ্বে আরও মহাদেশ আছে। আমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলব। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচন এলেই বাংলাদেশকে নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একই অভিযোগ করে পৃথক বক্তব্য দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তারপরও থেমে নেই আলোচনা, সমালোচনা, ষড়যন্ত্র ও প্রপাগান্ডা। আগামী ২২ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকে সামনে রেখে অনেকেই মনে করছেন, প্রতিবেশি দেশের (বাংলাদেশ) নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং বাংলাদেশ যাতে অতিমাত্রায় চীনের দিকে ঝুঁকে না পড়ে সেসব বিষয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন নরেন্দ্র মোদি। এ অবস্থার মধ্যেও দেশের অভ্যন্তরীণ দৃশ্যমান সমস্যা সমাধান এবং আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও মতামতের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখনও বঙ্গবন্ধুর সেই পররাষ্ট্রনীতি ‘কারো সাথে শত্রুতা নয়, সবার সাথেই বন্ধুত্ব’ পথেই হাঁটছে সরকার।
সরকার যেমন অর্থনৈতিক সংকট, বিদ্যুৎ সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে চাপে আছে, তার চেয়ে বেশি চাপে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নানারকম হুমকি এবং সতর্কবার্তার কারণে। দেশি-বিদেশি চাপ ও সমস্যা মোকাবেলা করাটাই আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছে। গত ২৪ মে তারা নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আরও কিছু শর্ত বা পরামর্শ দিবে বলে কূটনৈতিক মহল ধারণা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কি রকম নির্বাচন চায় সে সম্পর্কেও তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু একাই নয়, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশকে আস্তে আস্তে চাপ দিতে শুরু করেছে। ১২ জুন ইউরোপের ৬ জন এমপি একটি চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উত্থাপন করেছে। মজার ব্যাপার হলো এর আগে মার্কিন ৬ জন রিপাবলিকান সদস্য যে ধরনের চিঠি দিয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ জনের ঠিটি প্রায় হুবহু একই রকম। দুইটি চিঠিতেই শেখ হাসিনার নাম যেমন ভুলভাবে লেখা হয়েছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সমস্যাগুলোকে একইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর ফলে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক মহলে একটি শক্তিশালী লবিস্ট গ্রুপ কাজ করছে।
বিদেশে রাষ্ট্রগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরকারের ওপর আস্তে আস্তে চাপ প্রয়োগ করছে। ইতিমধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশনে নেয়ার আগে তাদের অতীত পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘকে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শিগগির বাংলাদেশে আসছেন। এরকম একটি পরিস্থিতি এই চাপগুলো সরকারের ওপর কি রকম প্রভাব ফেলবে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চাপগুলোর প্রভাব বহুমাত্রিক।
এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে ওই বিবৃতিকে মিথ্যা এবং প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১৫ জুন পাল্টা চিঠি দিয়েছেন ১৯২ মার্কিন বাংলাদেশি বিশিষ্ট নাগরিক।
যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চীনের সমর্থন:
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত ১৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উত্তরে বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে এবং নিজেদের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই একটি উন্নয়নের পথ অনুসরণের প্রশ্নে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।
ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরাও অবগত। আসলে, নিজেদের জাতিগত বৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা এবং মাদক সমস্যার সমাধান না করে একটি নির্দিষ্ট দেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে। চীনা মুখপত্রের ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের জনগণের দৃঢ় অবস্থানের কথাই প্রকাশ করে না, তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের মনের কথাই বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তার প্রতিক্রিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সার্বভৌম অধিকারের প্রশ্নে সবাই সম্মান দেখাবে, সেটাই বাংলাদেশ চায়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য সরকারের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে চায়, যে কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশের মত বাংলাদেশও নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সার্বভৌমত্বের চেতনার ভিত্তিতে সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির লবিস্ট ফার্ম:
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী লবি ফার্ম ব্লু স্টারকে বিএনপি এবার ভাড়া করেছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক খবরে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। একই তথ্য গত ১৫ জুন ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এও প্রকাশিত হয়েছে। ওই খবরের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি অ্যপোয়েন্টস লবিং ফার্ম ইন ইউএস বিফোর ইলেকশন’। এই সংবাদে বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপি’র পক্ষে প্রভাবিত করার জন্য এবং সরকারের বিপক্ষে কাজ করার জন্য ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিককে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি।
এসব নিয়োগের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করতে হয়। আর এই টাকার উৎস কি?- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিউইয়র্ক পোষ্টের একটি খবরে বলা হচ্ছে, জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন এখন ব্লু স্টার লবিং ফার্মের পক্ষে কাজ করবেন। হান্টার বাইডেন কেবল বাইডেনের পুত্র- এ কারণেই নয়, মার্কিন রাজনীতিতে তিনি অনেক প্রভাবশালী একজন লবিস্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সমস্ত লবিস্টদের সবচেয়ে উচ্চমূল্য, তার মধ্যে হান্টার বাইডেন অন্যতম। আর তার নিয়োগের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আরও বেশি প্রোরোচিত করার কাজ সহজ হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
উল্লেখ্য যে, গত পাঁচ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে- এই সমস্ত লবিস্ট ফার্মগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে বিশেষ করে হোয়াইট হাউস, সিনেট এবং কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্যদের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার করেছে। বাংলাদেশ বিরোধী এই প্রচারণাগুলোকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উত্থাপনের জন্য লবিস্ট ফার্মগুলো নানা রকম তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করে উপস্থাপন করে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতা এবং হোয়াইট হাউসের নীতি নির্ধারকরা প্রভাবিত হন এবং তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ‘ক্ষমতা উল্টাতে পারে,পাল্টাতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ‘ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে’। পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষেধাজ্ঞা জারি করলো? যখন আইনশৃংখলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লংঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই’ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি জানি না, হয়তো তারা আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়ত গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি।’
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে ১৫ মে রাজধানীর গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কেনাকাটায় কোনো দেশ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে তাদের কাছ থেকে সরকার কিছু কিনবে না। আমি নির্দেশ দিয়েছি নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশ থেকে কিচ্ছুটি কিনবেন না।’ শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পরও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি, সয়াবিন তেল ও তুলা কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এসব নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন জানান, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যে বা যারা বাধা দেবে, ভোটারদেরকে যারা ভয় ভীতি দেখাবে, তাদেরকে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।’ ওই বক্তব্যে ব্লিঙ্কেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতির ব্যাপারে ৩ মে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। এ ব্যপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৩ মে দিয়েছে, আমরা মানুষকে জানাইনি। তাদের চিঠি আমরা কেন জানাবো? তারা জানাক।’ ৪ জুন ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে; সেই মহাদেশের সঙ্গে আমরা যাতায়াত করবো বন্ধুত্ব করবো; আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, উন্নত হবে, আরো চাঙ্গা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে এবং প্রশিক্ষণ দিয়েই র্যাব সৃষ্টি করা হয়েছিল। র্যাব মৌলবাদীদের সন্ত্রাস ও জঙ্গি বোমা হামলাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তার পরও মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে র্যাবের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন থেকে এর প্রতিবাদ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহবান জানানো হলেও তার কার্যকর হচ্ছে না। এর মধ্যেই এলা ভিসা নীতি।
গত ১২ এপ্রিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন আওয়ামী লীগ জনগণের ভালোবাসা নিয়েই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবে। তবে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
দেশে এখন সরকার হটানোর চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে এখন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে সরকার হটানোর। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো শক্তি নেই তাকে পরাজিত করার। বুধবার নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দায় মুক্তি দিতে সংবিধানে কুখ্যাত আইন প্রণয়ন করেছে। ভুলিনি মির্জা ফখরুল। ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ড। জাতীয় নেতাদের খুনিদের তারা পুরস্কৃত করেছে বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। আমরা ভুলিনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হত্যা করার জন্য তারা গ্রেনেড হামলা করেছে। বিএনপি আমাদের মারতে চায়, হত্যা করতে চায়। কথা কথায় বলে ’৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।’
নির্বাচন এলেই বিএনপি-জামায়াত;বাম-ডান দল সক্রিয় হয়ে ওঠে- সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
এক শ্রেণির মানুষ সমাজে শান্তি বিনষ্ট করে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গত বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই বিএনপি-জামায়াত এবং অতি বাম-অতি ডান দলগুলো ষড়যন্ত্র করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদের কোনো জনসমর্থন নেই কিন্তু নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্র করার জন্য সক্রিয় হয়। এরা আওয়ামী লীগের অর্জন চোখে দেখে না। জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে দেখেই এরা ষড়যন্ত্র করতে একাট্টা হয়।’
নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্রকারীরা এক হয়ে যায় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্রকারীরা এক হয়ে যায় নতুন ষড়যন্ত্র করার জন্য। নির্বাচন যেন না হয় সেজন্য তারা হইচই করতে থাকে। সব সময় আমরা এমনটা দেখেছি। গত ১০ জুন ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নের বৈন্য-কুশুরা পুলিশ ক্যাম্প উদ্বোধন ও মাদক-সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই অনেক স্রোত, কাউন্টার স্রোত আসে। যারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায় না। তারা এই কাজগুলো করে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
-বাবু/এ.এস