নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় যৌতুকের দাবিতে মোছাঃ রুনা আক্তার(৩২) নামে এক গৃহবধূ শিক্ষিকাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে সারা শরীর থেঁতলে দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষিকার নাম মোছাঃ রুনা আক্তার (৩২)। তিনি উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নে বান্দনাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
অভিযুক্তরা হলেন- স্বামী রিয়াজ আহম্মেদ সিরাজ (৪০),স্বামীর বড় মো.অলি উল্লাহ(৪৫),স্বামীর বড় বোন মোছাঃ শিল্পী আক্তার (৪৭)। তারা সবাই উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচন্দরা গ্রামের বাসিন্দা এবং আছাব উদ্দিনের সন্তান ।
অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৩ বছর আগে উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচন্দরা গ্রামের আছাব উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ আহম্মেদ সিরাজের সাথে আমার পারিবারিক ভাবে ইসলামি রীতি অনুসারে বিয়ে হয় এবং ৪ সন্তানের মা হই । গত সাত বছর আগে আমি উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নে বান্দলাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করি।যোগদানের পর থেকে আমার স্বামী,ভাসুর এবং স্বামীর বড় বোন যৌতুকের জন্য মারধর, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করছে । এর মধ্যে মারধর না করার শর্তে সোনালী ব্যাংক লি: কেন্দুয়া শাখা থেকে গত এক বছর আগে ৪ লাখ টাকা ঋণ তুলে দেই । এর কিছু দিন পর সমুদয় টাকা খরচ করে ফেলার পর আবার আমার বাবার কাছ থেকে যৌতুক হিসাবে আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে । আমি বার বার অপারগতা প্রকাশ করলে গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে বারটায় ১নং বিবাদী আমার স্বামী রিয়াজ আহম্মেদ সিরাজ,২নং বিবাদী ভাসুর অলি উল্লাহ এবং ৩নং বিবাদী স্বামীর বড় বোন শিল্পী আক্তার মিলে আমাকে লোহার রড দিয়ে শরীরের হাত,কোমর পেট,বুকসহ বিভিন্ন অংশে মারাত্মক ভাবে নীল ফুলা বেদনাযুক্ত যখম করে এবং আমার গলায় পা দিয়ে পারা মেরে শ্বাসরোধ করে ফেলে। এক সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর আমার সন্তাদের সহযোগিতায় অপরিচিত অটোরিকশা যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করি এবং কিছুটা সুস্থ হয়ে থানায় এসে অভিযোগ করি, যার জন্য বিলম্ব হয়। আমি এদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
শিক্ষিকা রুনা আক্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যৌতুকের জন্য আমার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন আমাকে প্রায়ই নির্যাতন করত। গত শনিবার আবার মারধর করেছে। আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এনিয়ে কেন্দুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি আশাকরি পুলিশ আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।
এবিষয়ে শিক্ষিকার অভিযুক্ত স্বামী রিয়াজ আহম্মেদকে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষক নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জামিরুল হক তাঁর স্বামীসহ অভিযুক্ত বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
শিক্ষক, মানবাধিকার ও নারী নেত্রী কল্যাণী হাসান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একজন শিক্ষিকাকে যৌতুকের জন্য তার স্বামী এবং স্বামীর বাড়ির লোকজন মিলে যে ভাবে যখম করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি এদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
এবিষয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক পিপিএম বলেন, নারী নির্যাতনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।