রবিবার ২২ জুন ২০২৫ ৮ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ২২ জুন ২০২৫
সিএনজিতে গ্যাস সিলিন্ডার, ঝুঁকিতে যাত্রীরা
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪, ১২:৩৯ PM আপডেট: ২৫.০৩.২০২৪ ১:৩৯ PM
যত্রযত্র বেঁধে রেখে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। সিএনজির পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। গ্যাস সিলিন্ডারের সামনে বসেই হরহামেশা ধূমপান করছেন যাত্রী। সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে প্রাণহানির আশংকা বাড়ছে।  হরহামেশা ব্যবহার হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার।

জ্বালানী গ্যাস সিলিন্ডারের যথাযথ ব্যবহার না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। এসব ঘটনা বিশ্লেষণে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাা না রেখে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকে টাইম বোমের সাথে তুলনা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তবে এ সবের বাইরে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দেখা মিলবে শত শত এলপিজি গ্যাস চালিত ৩ চাকার বাহন সিএনজির। শুধু দিনাজপুর জেলা কিংবা ঘোড়াঘাট উপজেলা নয়! এমন চিত্র সারা দেশের সব জেলা-উপজেলায়।

অল্প ভাড়ায় দ্রুত যাতায়াতের অন্যতম বাহন এই জ্বালানী গ্যাস চালিত সিএনজি। কাছের কিংবা দুরের যাত্রায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় তিন চাকার এই বাহনটি। তবে গ্যাস চালিত এই সিএনজিতে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থাা। বাহনটির পেছনে মনগড়া ভাবে ২ থেকে ৩টি পর্যন্ত গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রী পরিবহণ করে চলছে। এ সব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে সিএনজি’র জ্বালানী হিসেবে। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টাইম বোমের এই গাড়িটিতে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন নানা বয়সী হাজার হাজার যাত্রী। অনেক যাত্রী এসব গ্যাস সিলিন্ডারের সামনে বসেই হরহামেশা ধূমপান করছে। তবে এসব নিয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কোন দফতরের।

রবিবার সকালে সরেজমিনে ঘোড়াঘাট উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের চার মাথা বাস¯ট্যান্ড থেকে কামদিয়া বাজার পর্যন্ত যাতাযাতের জন্য যাত্রীর অপেক্ষায় সাড়িবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ৮ থেকে ১০টি সিএনজি। প্রতিটি সিএনজির পেছনে যাত্রী বসার সিটের সাথে রাখা ২ থেকে ৩টি পর্যন্ত এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার। এ সব সিলিন্ডারের সামনে চেপেই নিয়মিত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সহ নানা বয়সের যাত্রী। একই চিত্র করতোয়া নদীর ত্রিমোহনীঘাটে। সেখানে সড়কের উপরে দাঁড়িয়ে আছে ১৫ থেকে ২০টি সিএনজি। যাত্রী নিয়ে তারা নিয়মিত যাতায়াত করে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী চারমাথা মোড় পর্যন্ত। এসব সিএনজিতেও রাখা একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার।

একটি সিএনজিতে একাধিক রান্নার কাজে ব্যবহারিত গ্যাস সিলিন্ডার রাখার কারণ জানতে চাইলে এ সব সিএনজির চালক এবং মালিকরা জানান, আগে তারা বগুড়া থেকে সিএনজি গ্যাস ভরিয়ে আনতেন। তবে দুরত্ব বেশি হওয়ায় এবং মহাসড়কে তাদের সিএনজি উঠতে না দেওয়ায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস তারা ব্যবহার করছেন। এই গ্যাসের বোতল তুলনামূলক ছোট হওয়ায়, একসাথে ২-৩টি গ্যাসের সিলিন্ডার তারা গাড়িতে রাখছেন। যাতে যেকোন মুহুর্ত্বে একটি সিলিন্ডার শেষ হলে আরেকটি সিলিন্ডার তারা ব্যবহার করতে পারেন।

সিএনজিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে এ সব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। এতে যেকোন মুহুর্ত্বে ঘটতে পারে যেকোন ধরণের বড় দুর্ঘটনা। হতে পারে প্রাণহানির মত মর্মান্তিক ঘটনা। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস লিকেজ সহ যেকোন ত্রুটির কারণে এসব জ্বালানী গ্যাসের সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হতে পারে। আর কোন কারণে সিএনজিতে থাকা এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হলে সিএনজির পেছনে বসে থাকা যাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হতে পারে।

সিএনজিতে বসে ঘোড়াঘাট থেকে কামদিয়া যাচ্ছিলেন মহিলা ডিগ্রি কলেজে কর্মরত শান্ত ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই সিএনজিতে যাতায়াত করি। আমাদের পেছনে গ্যাসের সিলিন্ডার দৃশ্যমান। তবে ঝুঁকি নিয়ে হলেও, অন্যদের মত আমিও যাতায়াত করি।’

সিএনজির আরেক যাত্রী আফ্রিদি কবির রাকা বলেন, ‘প্রতি বছরই গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে বড় ধরণের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তার পরেও আমরা অসচেতনতাবশত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। তবে কোন কারণে সিএনজিতে থাকা এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হতে শরীরের অর্ধেক উড়ে যাবে।’

সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত ১০ বছর যাবত সিএনজি চালাই। শুরু থেকেই গ্যাস দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। আগে বগুড়া থেকে গ্যাস নিয়ে আসতাম। এখন স্থাানীয় দোকান থেকে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করছি। ছোট্ট একটি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ বার যাতায়াত করা যায়। তবে কোন সময় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।’

এদিকে ঘোড়াঘাট ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘সিএনজিতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরাতন গ্যাস সিলিন্ডার রংচং করে নতুন করা হচ্ছে। একাধিকবার রং করার কারণে গ্যাসের সিলিন্ডারের উপরে খোদাই করা মেয়াদের তারিখ মিশে গেছে। যত্রযত্র এসব সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে বড় ধরণের প্রাণহানি ঘটে আসছে। আমরা বিভিন্ন ভাবে সাধারন মানুষকে সচেতন করছি।’

ক্যাপশন-তিন চাকার বাহন সিএনজির পেছনে বেঁধে রাখা এলপিজি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সিলিন্ডারের সামনেই বসে আছেন দু’জন যাত্রী। ছবিটি রবিবার সকালে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার চার মাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে তোলা।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত