বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫ ৫ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫
শীতলক্ষ্যা নদীতে ৮০ কিলোমিটার কচুরিপানা, নৌযান চলাচল ব্যাহত
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪, ৫:৩৪ PM
গাজীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর প্রায় ৮০ কিলোমিটার নৌপথ কচুরিপানায় ঢেকে গেছে। শীতলক্ষ্যা নদী শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলাকে ভাগ করেছে। গত প্রায় দুই মাস যাবত কচুরিপানার কারণে ওইপথে স্বাভাবিক নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। 

বাধ্য হয়ে যেগুলো চলাচল করছে সেগুলো গন্তব্যে যেতে দ্বিগুণ তিনগুণ সময় লাগছে। জালানী খরচও লাগছে কয়েকগুণ। অনেক ট্রলার মালিক ও চালকরা নিজ নিজ ঘাটে নৌকা নোঙর করে রেখেছেন। মানবেতর দিন কাটছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। পোশাক শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে।

শীতলক্ষ্যা নদীর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ত্রিমোহনী থেকে নারায়নগঞ্জ, রূপগঞ্জ, ঢাকার ডেমরা এলাকায় নৌযানগুলো চলাচল করে থাকে। ত্রিমোহনী থেকে নরসিংদীর চরসিন্দুর পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীজুড়ে কচুরিপানা পানিতে ভাসছে। নদীর কিছু এলাকায় কচুরিপানা ও খুঁটি দিয়ে মাছ চাষ করায় এমনটি হয়েছে বলে দাবী করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এসব উচ্ছেদে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শীতলক্ষ্যা নদী শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলাকে ভাগ করেছে। নদীর দুই পাড়ের মানুষের নদী পারাপারের জন্য শ্রীপুর উপজেলা অংশে রয়েছে গোসিঙ্গা এবং কাপাসিয়ার উপজেলার দরদরিয়া ঘাট। 

এ উপজেলার চৌড়াপাড়া, দরদরিয়া, ভুলেশ্বর, দেওনা, হাইলজোর গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে শ্রীপুরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে নিয়মিত যাতায়াত করে। এ ছাড়া কাপাসিয়া থেকে শ্রীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করে হাজারো শ্রমিক। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় তারা পড়েছে বেকায়দায়। কারণ, সড়ক পথে গন্তব্য যেতে হলে তাদেরকে ১৫ থেকে ২০ কিলো মিটার ঘুরে গন্তব্য পৌছতে হবে।

মাঝি আব্দুর রহমান বলেন, কচুরিপানার জন্য জালানী (তেল) বেশি লাগে। নদী দিয়ে স্বাভাবিকভাবে নৌকা চালিয়ে যাইতে পারি না, বইসা থাকা লাগে। কচুরিপানার জন্য নৌকা বোট যাইতে পারে না, আইটকা থাকে। সময় বেশি লাগে। সময়মতো বাজারে পণ্য নেওয়া যায় না।

ট্রলার চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগে সারাদিন নদী পারাপারের জন্য ১০ গোদারা ব্যবহার করতে পেরেছেন এখন ২ অথবা ৩ গোদারা ব্যবহার করতে পারেন। গত দেড় মাস আগে থেকে নদী পথে কচুরিপানা ভাসছে। আগামী কোরবানী ঈদ পর্যন্ত চলবে। যদি ঈদের পর বৃষ্টি পড়ে নদীর পানি বেড়ে কচুরিপানা কিলিয়ার হয় তাহলে ট্রলার চালাতে পারব।

জামাল উদ্দিন বলেন, নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে গাজীপুরের কালিগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, ত্রিমোহনী পর্যন্ত দনীতে কচুরিপানার জট বেঁধে থাকে। কচুরিপানার জন্য ট্রলার চলে না। এক ঘন্টার রাস্তা একদিনে পৌছতে হয় কচুরিপানার জন্য। কালীগঞ্জ থেকে বরমী আসলে যেখানে লাগতো ৩০ লিটার জালানি, এখন লাগতেছে ১৩০ লিটার জালানি। নদীতে কচুরিপানা থাকার কারণে ১০০ লিাটার বেশি গুনতে হচ্ছে চালকদের।

ট্রলার চালক মফিজুলকোনো ট্রলার মালিক ট্রিপ দিতে রাজী হলেও জালানী খরচ বেশি দিতে হয়। সময় বেশি লাগায় ব্যবসায়ীরাও মালামাল পরিবহন করতে রাজী হয় না।

নৌকা চালক নুরুল ইসলাম বলেন আমার নৌকা এবং বোট আছে। কচুরিপানার জন্য জ্যাম থাকার কারণে নৌকা চালাতে পারি না। আমারা এখন বেকার বসে আছি। জোয়ারের সাথে কচুরিপানার জ্যাম বরমী সীমানায় এসে আটকায়। বরমীর ত্রিমোহনী থেকে নরসিংদীর চরসিন্দুর পর্যন্ত কচুরিপানার জন্য নৌকা চালাতে পারি না। ৮০ থেকে ৯০ কিলো মিটার পর্যন্ত নদীতে কচুরিপানার জ্যাম লেগে থাকে।  

খোজেখানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী চৌড়াপাড়া গ্রামের জলিল মিয়ার মেয়ে নৌকার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তিনি জানান, সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। নৌকা আসেনি। দুই ঘন্টা পরে জানতে পারছি নৌকা চলাচল বন্ধ। এখন বাড়ী চলে যাব।

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু বাক্কার ছিদ্দিক আকন্দ বলেন, আমাদের কলেজে বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে।পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার অনেক শিক্ষার্থীও রয়েছে। বিশেষ করে দরদরিয়া, রায়েদ আমরাইদ এলাকার বেশিরভাগ উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। তাদেরকে শীতলক্ষা নদীর গোসিংগা ঘাট দিয়ে আসতে হয়। নদীতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা জমে যাওয়ার কারণে শুনেছি নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার অনেক শিক্ষার্থী কলেজে আসতে পারছে না।

গোসিংগা ঘাট ইজারাদার মিন্টু মিয়া বলেন, দৈনিক ৬ হাজার ৮০০ টাকা উঠাতে হবে। তা না হলে ইজারা টাকা পরিশোধ করতে পারবোনা। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় টেনশনে আছি।

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে ফান্ড দিয়ে কচুরিপানা জট সরানো সম্ভব নয়। এসব সরাতে বিআইডব্লিউটির সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিআইডব্লিউটির নরসিংদীর-ঘোড়াশাল বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা নূর স্বপন জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদীর চরসিন্দুর পর্যন্ত নদীর ক্যানেল চলাচলে উপযোগী রয়েছে। চরসিন্দুর থেকে শ্রীপুর উপজেলার বরমী পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধের বিষয়টি দেখতে হবে। এটা আমাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী (গাজীপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নেই) বলেন, নরসিংদী থেকেই জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে এই সেক্টর পরিচালিত হয়। নদীগুলো নিয়ে বিআইডব্লিউটি কাজ করে। যারা মাছের ঘের করে তারা কচুরিপানাগুলো স্থায়ী হওয়ার জন্য দায়ী। শীত সিজনে পানি কম থাকায় কচুরিপানার গুড়া (শিকড়) মাটিতে ছুঁয়ে যায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কচুরিপানাগুলো পানি প্রবাহের কারণে এক জায়গায় থাকে না। চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘের করার কারণে কচুরিপানাগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে। নদীতে ঘের করে মাছ চাষের কোনো সুযোগ নেই। মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমান আদালত) মাধ্যমে ঘের মালিকদেরকে সাজা দেওয়া গেলে নদীতে তাছ চাষ থেকে বিরত থাকতো।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত