দেশের দক্ষিণের সীমান্ত জেলা কক্সবাজার। আর তারই দুই উপজেলা উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তবর্তী ১৯টি পয়েন্টে সক্রিয় মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারিরা। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে মাদক ও অস্ত্রের চালান প্রবেশ করলেও আটকা পড়েন একজনের জালে। তার নাম মো. হাফিজুর রহমান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার এই কর্মকর্তা গেল তিন বছর মাদক, অস্ত্রসহ নানা চোরাকারবারিদের আতংকের কারণ ছিলেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশে মাদকের ঢল ঠেকিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সেজন্য মিলেছে পুরস্কারও।
দেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তখনি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মাদক কারবারিরা। চোরাকারবারি সিন্ডিকেট প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। তাদের টার্গেট বর্তমানে বন্ধ থাকা উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত থেকে টেকনাফের লেদা পর্যন্ত মাদকের রুট সচল করা। কারণ এ্যাডিশনাল এসপি হাফিজ এ সীমান্ত পয়েন্টের চোরাকারবারিদের কাছে আতঙ্কের নাম। তাকে সরাতে পারলেই যেন মাদক কারবারিদের মুক্তি মিলবে। সহজেই আনা যাবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণ নেশা ইয়াবার বড় বড় চালান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের স্থানীয় প্রতিনিদের মতে- মাদক-অস্ত্রবাজি ঠেকাতে প্রশাসনের সহায়তায় তারা নিজেরাও কাজ করছে। কোন মাদক কারবারি মাথাছাড়া দিয়ে উঠার আগেই তাকে থামানোর পরামর্শ তাদের। সেক্ষেত্রে চৌকস কর্মকর্তাদের ভূমিকা খুবই প্রয়োজন।
র্যাব-১৫ এর টেকনাফ সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত এ্যাডিশনাল এসপি মো. হাফিজুর রহমান সফলতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তথ্যমতে তার অভিযানে ২০২২ সালে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমান ইয়াবা, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৩০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া ওই বছর ৪৯৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ৩৩৭.৯ লিটার বিদেশি মদ, ৬৩৭ ক্যান বিয়ার, ২ টি একনলা বন্দুক, ১ টি এসএমজি, ২টি এলজি, একটি পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলিসহ আসামি গ্রেফতার করেন ১৬৫ জন।
২০২৩ সালে ২৪ লাখেরও বেশি ইয়াবা যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭ কোটি টাকা। ২৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস যার বাজার মূল্য ১৩ কোটি টাকা। ১৯২.৪৯ লিটার বিয়ার, ৩৯৩.৭ লিটার মদ, ১৬ টি এলজি, ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি শর্টগান, ১০টি একনলা বন্ধুকসহ আসামি গ্রেফতার করেন ২৫৭ জন।
২০২৪ সাল ১১ লাখ ইয়াবা যার মূল্য ৩ কোটি টাকা। এছাড়া- ৪০টি অস্ত্র, ১১৮ রাউন্ড বুলেট, ৩৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ আসামি গ্রেফতার করেন ১৪৫ জন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপহরণ, স্বর্ণ চোরাকারবার এবং ইয়াবা সিন্ডিকেটের কাছে আতঙ্কের নাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাফিজুর রহমান। দেশের মাটিতে মাদক ঠেকাতে মরিয়া এই কর্মকর্তাকে সরাতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে নেমেছেন এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ সিন্ডিকেটে মাদকসহ দুই ডজন মামলার আসামিও রয়েছে। র্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং মাদকবিরোধী অভিযানে চৌকস কর্মকর্তাদের অনিহা সৃষ্টি করার জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে সিন্ডিকেটটি।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়- কক্সবাজার র্যাব-১৫, সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খারাংখালী এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান একাধিক মামলার আসামী শামসুল আলমকে আটক করে তার পূর্ব মহেশখালী পাড়ার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করার সময় ২০০-৩০০ দুর্বৃত্ত একত্রিত হয়ে র্যাবের উপর হামলা করে। এসময় র্যাবের ৩টি গাড়ি ভাংচুর করে ও র্যাব সদস্যদের আহত করে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে মাদক সিন্ডিকেটটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি নুরুল আলম বলেন- মাদক ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এখন মিলেমিশে একাকার। তাদের জন্য বড় বাধা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টির কৌশল হিসেবে নিয়েছে এসব মাদক সিন্ডিকেট।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা সচেতন নাগরিক নাছির উদ্দিন বলেন- এ্যাডিশনাল এসপি হাফিজ আমার দেখা একজন দক্ষ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি দায়িত্ব নেবার পর কমেছে মাদক চোরাচালান। আতংকে থাকেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। এছাড়া ডাকাতদের আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তাতে কমেছে ডাকাতিও।
উখিয়ার পালংখালী এলাকার সমাজপতি মিজানুর রহমান বলেন- মুক্তিপণ আদায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপহরণ, স্বর্ণ চোরাকারবার, ইয়াবা কারবারিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেটকে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দায়িত্বশীল অফিসারদের ব্যাপারে অপপ্রচার চলছে। এটি ঠেকাতে হবে। না হয় মাদকে সয়লাব হবে দেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১৫ এর টেকনাফ সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এ্যাডিশনাল এসপি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, গত দুই বছরের অধিক দায়িত্ব নেবার পর থেকে অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করে কাজ করছি। টেকনাফ-উখিয়ায় বিভিন্ন পাহাড়ে অনেক অভিযান চালিয়ে অপহরণকারি, মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের আটক করেছি,তাই আমার শত্রু হবে এটি স্বাভাবিক। কে কি ভাবলো, কে কি বলছে তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল,আমি যতদিন আছি ততদিন অপহরণকারি, মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাব। র্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং মাদক বিরোধী অভিযানে চৌকস কর্মকর্তাদের অনিহা সৃষ্টি করতে মাদক ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এসব অপপ্রচার করছে।