মিঠা পানিতে ইলিশের প্রজনন রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে রোববার মধ্য রাতে। এরপরই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অনান্য মাছ ধরতে নেমেছে জেলেরা।
মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ধরে আনা ইলিশ জেলেরা বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন নদী উপকূলীয় আড়তগুলোতে। তিন সপ্তাহ পরে আবারও ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে আড়তগুলো। নিষেধাজ্ঞার আগের চাইতে ইলিশের দামও এখন কিছুটা কম।
সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট গিয়ে দেখাগেছে আড়তগুলোতে ইলিশ নিয়ে আসছেন জেলেরা। আবার অনেক জেলে নৌকা ও জাল নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় বেরিয়ে পড়ছেন।
বরফ ছাড়া এসব ইলিশ জেলেদের উপস্থিতিতে হাকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন আড়ৎদাররা। মুহুর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ইলিশ। পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে। তবে সংখ্যায় কম।
সদরের হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে মো. শরীফ বলেন, মেঘনায় ভোর রাতে এক নৌকায় তারা ৩জন নেমেছেন ইলিশ ধরতে। তাদের পাওয়া ছোট-বড় ইলিশ বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকা। কিছু সময় বিরতি দিয়ে আবারও নামবেন নদীতে।
নরসিংদী জেলা থেকে তাজা ইলিশ কিনতে এসেছেন কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে মোস্তাক নামে একজন বলেন, এর আগেও হরিণা মাছঘাটে এসেছেন। তাজা ইলিশ কেনার জন্য এবারও এসেছেন। এঘাটের ইলিশে কোন ভেজাল নেই। ছোট বড় ১৩ হাজার টাকার ইলিশ কিনেছেন তারা। দামও ভালো পেয়েছেন।
পাঙ্গাস মাছের পাইকারি বিক্রেতা কালু পাটওয়ারী বলেন, গত বছর এই সময়ে ইলিশের জালে অনেক পাঙ্গাস ধরা পড়েছে। এ বছর সংখ্যায় খুবই কম। আজকে ছোট সাইজের পাঙ্গাস প্রতিকেজি ৭০০টাকা এবং বড় সাইজের পাঙ্গাস প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০টাকা। জেলেদের ধরে আনা প্রতি পাঙ্গাসের ওজন ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৮ থেকে ১০ কেজি।
ঘাটের আড়তদার সেলিম সৈয়াল বলেন, আমাদের এই ঘাটে ইলিশ হালিতে বিক্রি হয়। ছোট সাইজের একহালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০টাকা। মাঝারি সাইজের (৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজন) এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজার থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন আক্তার হোসেন নামে ক্রেতা। তিনি বলেন, আজকে আগের তুলনায় দাম একটু কম আছে। ৪৫০ টাকা করে ৫ হালি ইলিশ কিনেছি। ওজন ২৫০ থেকে ৩০০গ্রাম। নিষেধাজ্ঞার আগে এই সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০টাকা।
এই আড়তের সবচাইতে প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন যে নিষাধাজ্ঞা দিয়েছে, তা আমরা মেনেছি। আজকে সকাল থেকেই জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসছে। তবে ইলিশের সাইজ ছোট। বড় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। আবার কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ডিম ছেড়ে দেয়া। তবে কয়েকদিন অতিবাহিত হলে বুঝা যাবে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের বিচরণ কি পরিমাণ আছে।
ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান ইলিশের প্রাপ্যতা সম্পর্কে বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। বছর জুড়েই ইলিশ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এই সময়টাতে সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। তবে ইলিশের চলার পথ সুগম করলে নদীতেও বছরজুড়ে ইলিশ পাবেন জেলেরা।