ভরা মৌসুমেও চালু হয়নি সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বেশ কিছু বিধি-নিষেধ দিয়ে রেখেছে প্রশাসন। এছাড়া ঘাট নির্দিষ্ট না করায় জাহাজ ছাড়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী এবং পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা।
গত ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জানুয়ারিতে ইনানী ঘাট থেকে দুটি জাহাজ চালু হলেও, কয়েকদিন পরেই তা বন্ধ করা হয়।
এর আগে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। যদিও প্রশাসনিক বিধি নিষেধের কারণে এখনও সেখানে পা পড়েনি পর্যটকের। ঠিক কী কারণে এখনও জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছেনা তা কেউ বলতে পারছেন না। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এই খাতে জড়িতরা।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে আমাদের চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে। আমরা স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে কোনোরকম চলতেছি। জমি বিক্রির সুযোগ নেই। কারণ, এখানে কেউ বিনিয়োগ করছে না।
ভুক্তভোগী অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, চার মাস পর্যটক রাত্রিযাপন করুক, অবাধে নয়, সীমিতকরণের মাধ্যমে এটা চলুক। চার মাস প্রতিদিন ৫ হাজার লোক আসুক, বাকি ৮ মাস পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে যে নীতিমালা দেবে সেটা পরিবেশবান্ধব করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা প্রস্তুত আছি।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, পরিবেশের দোহাই দিয়ে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধও দিয়েছে। এই অবস্থায় আমরা যদি বিজনেস করতে না পারি তাহলে লাখ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ পানিতে পড়বে। তার উপর শতভাগ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল দ্বীপবাসী যদি এই মৌসুমেও ব্যবসা করতে না পারে তাহলে হুমকির মুখে পড়বে তাদের জীবিকা।
টুয়াকের সাবেক সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, আসলেই আমরা অত্যন্ত হয়রানির শিকার হচ্ছি। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে তো পর্যটন হয় না। বর্তমানে হাজার হাজার যুবক উদ্যোক্তা হয়েছে। আজকে তারা সবাই পথে বসবে এই প্রক্রিয়া থাকলে। কোনো দিক নির্দেশনা নাই। এই প্রক্রিয়াটা আগে থেকেই করা উচিত ছিল। তিনটা জাহাজের মৌখিক অনুমতি দিয়েও শুরু হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, বছরের চার মাস সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যান পর্যটকরা। বর্তমানে ভরা মৌসুমে দ্বীপে যাতায়াত করতে না পারার প্রভাব পড়েছে সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্পে। এই মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার পর্যটক প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করেন। পর্যটকের অভাবে বর্তমানে পথে বসার উপক্রম স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। সেই সাথে কর্মসংস্থানের অভাবে জীবন ও জীবিকা চরম অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী।