‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন— ডেভিল কারা? এই অপারেশনের আওতায় কারা পড়বে? ইন্টারনেটে ‘ডেভিল’ এর সংজ্ঞা যা পাওয়া যায়, তা এক জায়গায় করলে দাঁড়ায়— এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘শয়তান’; যা অনেক সংস্কৃতি ও ধর্মে অশুভ শক্তির প্রতীক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি জানান, শনিবার থেকে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছে পুলিশ বাহিনী। তাদের সাহায্য করছে সেনাবাহিনী। যারা দেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে’, তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা এই অপারেশনের মূল লক্ষ্য।
আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ‘ডেভিল হান্ট’ বিষয়ে তারা কী ভাবছেন, তা জানা যায়। তাদের কেউ কেউ বলছেন, যারা বেশি ‘শয়তানি করবে’ তাদের আটক করা হবে। কেউ আবার বলছেন, যে কোনও অপরাধীই ডেভিল। আর কেউ কেউ বলছেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে দুষ্কৃতিকারী, সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসী এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিবে। তবে তাদের প্রত্যেকেই বলছেন, এ অপারেশনে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হবেন না।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ডেভিল মানে শয়তান। যারা বেশি করে শায়তানি করবে, তাদের ধরতেই মূলত এই অভিযান।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, ডেভিল হলো তারা, যারা এই সোসাইটির জন্য শত্রু। যে কোনও অপরাধীই ডেভিল। যারা অপরাধী, এই সমাজের জন্য ক্ষতিকর, সোসাইটির জন্য ক্ষতিকর এবং যারা সোসাইটির জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়; তারাই হলো ডেভিল।
‘সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উল্লেখ করে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতারুল আলম বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে দুষ্কৃতিকারী, সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসী এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হবে না। তবে এই অপারেশনে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, যারা চলমান শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার তৎপরতার সঙ্গে জড়িত এবং নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে করেছে বা করবে, তাদের ডেভিল বলা হয়। একইসঙ্গে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের ‘ডেভিল হান্ট অপারেশনের’ আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
ডেভিল কীভাবে শনাক্ত করা হবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপরাধী যতই বড় হোক না কেন, সে আইনের চোখে অপরাধী। যারা অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের সব তথ্য পুলিশের কাছে আছে। সেইসঙ্গে অপরাধীদের সার্বিক বিষয় ও গতিবিধি নজরদারি করছে গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম।
প্রসঙ্গত, ডেভিলকে একটি ‘ক্ষতিকর শক্তি’ হিসেবেই দেখা হয়। মধ্যযুগীয় ইতিহাসের মার্কিন অধ্যাপক জেফরি বার্টন রাসেল ব্যাখ্যা করেছেন, কয়েকরূপে শয়তানকে চেনা যায়; যেখানে সে ঈশ্বর থেকে পৃথক মন্দ একটি শক্তি এবং মানুষের অন্যায়ের প্রতীক।