বুধবার ২ জুলাই ২০২৫ ১৮ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২ জুলাই ২০২৫
আলোচিত সেই বৈঠকে সেনাপ্রধান আসলে কী বলেছেন?
বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ৭:১১ PM আপডেট: ২২.০৫.২০২৫ ৭:২৯ PM
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের ৯ মাস বাদে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে, তার উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনে জোর দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

গতকাল বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে করিডোর, বন্দর, সংস্কারের মতো বিষয়ও উঠে আসে বলে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সেনাপ্রধানের অবস্থান আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে ঢাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অনেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

একাধিক কর্মকর্তার বরাতে প্রথম আলো লিখেছে, নির্বাচন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেছেন, এ বিষয়ে তার অবস্থান আগের মতই। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে।

‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’ বলে জেনারেল ওয়াকার অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন– এমন তথ্য প্রথম আলোর পাশাপাশি সমকাল, কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর–সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। যা করার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই করতে হবে। যা-ই করা হোক না কেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যর মাধ্যমে সেটা হতে হবে।

সমকাল লিখেছে, পটপরিবর্তনের পর থেকে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার পরও কিছু মহল সেনাপ্রধান ও বাহিনীকে ‘অন্যায্যভাবে’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর– এমন কোনো কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনও যুক্ত হবে না। কাউকে তা করতেও দেওয়া হবে না। এই বাস্তবতায় সব পর্যায়ের সেনাসদস্যকে নিরপেক্ষ থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। আগামীতে নির্বাচনী দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেছেন, এখানে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সংস্কার প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করা হয়নি।

প্রথম আলো লিখেছে, অনুষ্ঠানে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘মব ভায়োলেন্সের’ বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনী এখন আরও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।

সংঘবদ্ধ জনতার নামে বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা ‘আর সহ্য করা হবে না’–এমন হুঁশিয়ারি সেনাপ্রধান দিয়েছেন বলে জানিয়েছে কালের কণ্ঠ।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফেইসবুক পোস্টে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের আলোচনার সারবস্তু তুলে ধরেছেন। তিনি তথ্যের উৎস হিসেবে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার কথা বলেছেন।

সায়ের লিখেছেন, করিডোর, বন্দর ও অন্যান্য নীতিগত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সরকার নেবে বলে সেনাপ্রধান স্পষ্ট করেছেন।

“সেনাপ্রধান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন- কোনো করিডোর হবে না।”

সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করে তার পোস্টে বলা হয়, “হঠাৎ করে কিছু ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসবে এবং এ দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে জানার ও নিজ মতানুযায়ী প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। কাজ হয়ে গেলে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে ফিরে যাবে-এমনটা হতে পারে না।”

সায়ের লিখেছেন, জুলাই-অগাস্টের ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সম্পর্কে সেনাবাহিনী কিছুই জানত না। এ বিষয়ে জাতিসংঘকে সেনাবাহিনী জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করেনি।

সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিক সায়ের লিখেছেন, সংস্কার নিয়ে সেনাবাহিনীর পরামর্শ সরকার আমলে নেয়নি। এই কয়েক মাসে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সংস্কার দেখা যায়নি।

জেনারেল ওয়াকার সতর্ক করেছেন, বর্তমান প্রশাসন অজান্তেই বাংলাদেশকে ‘বিদেশি শক্তিগুলোর জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্রের ময়দানের’ দিকে ধাবিত করছে-একটি ‘প্রক্সি যুদ্ধ’।

সায়েরের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের কার্যক্রমের প্রশংসা করে সেনাপ্রধান বলেছেন, তারা সরকার পরিচালনার বিষয়ে অনভিজ্ঞ, সেই কারণে দেশ পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই।

জেনারেল ওয়াকার বলেছেন, সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাওয়া উচিত, তবে নির্বাচনের পরেও সেনাবাহিনীকে ‘কয়েক মাস’ বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে হতে পারে।

সূত্র: বিডিনিউজ
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত