বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫ ২৮ কার্তিক ১৪৩২
বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫
সাম্য হত্যার নেপথ্যে কী? যা জানা গেল...
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫, ৮:০৭ PM
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবার খেতে গিয়ে মাদক কারবারিদের কাছে ট্রেজার গান (ইলেক্ট্রিক শক দেয়ার মেশিন) দেখতে পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। সেই ট্রেজার গান দেখতে চাওয়া নিয়ে তাৎক্ষণিক ধস্তাধস্তিতে মাদক কারবারিদের সুইস গিয়ারের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি।

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে ঘটনার দিন রাতে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ এবং পরে আরো আট জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি (২৫), মেহেদী হাসান (২৫), নাহিদ হাসান পাপেল (২১), মো. রিপন (২০), মো. সোহাগ (৩৩), মো. রবিন (১৮), মো. হৃদয় ইসলাম (২৪) ও সুজন সরকার (২৭)।

এর আগে গত ১৩ মে ঘটনার রাতেই শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদার (৩০)।

এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে দুই জন ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত বলেন, গত ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কতিপয় দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। এবং ঘটনার রাতেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় ডিবির একাধিক দল ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে এই সংক্রান্ত আরো ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাম্য এবং তার দুই বন্ধু একটি মোটরসাইকেলে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূলত মাদক ব্যবসার একটি চক্র আছে। মেহেদী সেই চক্রের মূল হোতা। তার গ্রুপের একজন রাব্বির হাতে একটি ট্রেজার গান ছিল। সেই ট্রেজার গানটি দেখে সাম্য সেটি কি জানতে চায়। জানতে চাওয়ার একটি পর্যায়ে তাদের মধ্যে যখন ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীর অন্যান্য যারা আছে, তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং ধস্তাধস্তির একটি পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

তিনি আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, ওই মাদক কারবারিদের একজন সদস্য রাব্বি তাৎক্ষণিকভাবে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক ফুডকার্ট আছে। সেখানে অনেক রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায়। আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, সাম্য এবং তার দুই সহপাঠী খাবারের জন্য সেখানে যায়। খাবারের জন্য গেলে ট্রেজার গানটি দেখে সাম্যের সন্দেহ হয়। জিনিসটা কি সেটি দেখার জন্য এবং সেটি নিতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি ঘটে।

তিনি আরো বলেন, তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান আছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে এখন পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কিনা, অন্য কোনো বিষয় আছে কিনা সেটি নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক কারবারিদের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ তিন নেতার মাজারের ওখানে, একটি মাঝখানে, একটি ছবির হাঁটে। তিনটি গ্রুপ তিনটি গ্রুপ মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। একটি গ্রুপের দায়িত্বে আছে মেহেদী। যে ৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে সবাই মেহেদীর গ্রুপের। সে ওই গ্রুপের দলনেতা। মেহেদী মূলত সুইস গিয়ারগুলো সাপ্লাই দিয়ে থাকে। ঘটনার দিন একটি কাল ব্যাগে করে মেহেদী সুইস গিয়ারগুলো আনে এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের কাছে সরবরাহ করে।

এই হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ঘটনার মূল আসামি আমাদের রিমান্ডে এলে আমরা হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভটি বের করার চেষ্টা করবো।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত