উত্তরায় গত ১৪ জুন (শনিবার) র্যাব পরিচয়ে নগদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিনতাই করে একটি চক্র। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে ২২ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত ১২ লাখ টাকা ও একটি হায়েস গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- মো. হাসান (৩৫), গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০), শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩), ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)। ব্যবহৃত হায়েস গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
মূলত এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্বে দিয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত এক সার্জেন্ট ও চাকরিচ্যুত এক পুলিশ কনস্টেবল। ছিনতাইয়ের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন পুলিশের চাকরিচ্যুত কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ নানা অপরাধে ১৭টি মামলা রয়েছে। চক্রের অন্যতম সহযোগী সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল। আরও অন্তত তিনজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৪ জুন সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিটের দিকে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে এক কোটি আট লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলযোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে উত্তরা ১২ ও ১৩ নম্বর রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে।
মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত মুখে কালো কাপড় বাঁধা ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি হাতে অস্ত্র নিয়ে নামে। তাদের কাছে আসতে দেখে নগদের টাকা বহনকারী কর্মচারীরা টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করে। তখন দুষ্কৃতকারীরা তাদের ধাওয়া করে চারটি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে। ঘটনাস্থল থেকে একজন কর্মচারী পালাতে সক্ষম হন।
গত রাত পৌনে ২টায় খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার হেফাজত হতে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ আট হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। হাসানের দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। পরে ডাকাত চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে ঢাকার উত্তরা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইমদাদুল শরীফকে আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার নিকট হতে লুণ্ঠিত ৮ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিনকে একই দিন রাতে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার নিকট হতে নগদ ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।