শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর একটি ভোটবাক্স থাকবে: পরওয়ার
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫, ৮:৩৩ PM
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে। কোনো বিদেশী প্রভুর কথায় আর দেশ চলবে না। নিজেরাই নিজেদের শক্তি নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ। দেশের ইসলামী দলগুলোর মাঝে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর একটি ভোটবাক্স থাকবে।

শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক মিলনায়তনে থানা মজলিসে শূরা/কর্মপরিষদ সদস্য ও টিম সদস্যদের নিয়ে শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দিল্লির প্রেসক্রিপশনে বার বার ক্ষমতায় এসে দেশের আলেম-উলামাদের উপর জেল-জুলুম, নির্যাতন করেছে। জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রতিটি আসনে আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলতে প্রতিটি বাড়ি, পাড়া ও মহল্লায় মহল্লায় কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে দেশে ইসলামী বিপ্লব করতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেন তিনি।’ জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অর্জিত বিজয় হাতছাড়া হয়ে যাবে; যদি এ দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ না হয়। নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যে আদর্শের মাধ্যমে তার সাথীদেরকে উন্নত নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করে একটি সোনার রাষ্ট্র তৈরী করেছিলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সেই আদর্শকে ধারণ করে এদেশে একদল মানুষকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আজ এদেশের জনগণ নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনে সত্যিকার নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দেখতে চায়। তারা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে ব্যাকুল হয়ে আছে। দেশে যদি নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের গণমুখী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের মানুষের সেবা অব্যাহত রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, আন্দোলনকে গতিশীল করতে শুধু গণসংযোগের মধ্যে থাকলে হবে না বা শুধু বই-পুস্তক পড়ে লিডারশীপ অর্জন করা সম্ভব নয়। লিডারশীপ অর্জন করতে হলে মাঠে ময়দানে লড়াই করে সংগ্রাম করতে হবে। সকল স্তরের মানুষের সাথে কথা বলা এবং যোগ্য লোক তৈরী করা। প্রত্যেকটি কাজ পরিকল্পনার আলোকে ধারাবাহিকভাবে করতে হবে। দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে জনমতকে ইসলামের অনুকূলে আনতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শ্রমজীবী সংগঠনের সাথে সু-সম্পর্ক তৈরী করা প্রত্যেক নেতৃবৃন্দের মৌলিক কাজ। তিনি বলেন, মক্কায় যোগ্য লোক ছিল কিন্তু জনমত ছিল না তার জন্যই মক্কা বিজয়ী হয়নি। তাই সকল নেতৃবৃন্দকে গনমূখী চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।

জামায়াতের নেতৃবন্দের উদ্দেশ্যে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের ব্যবহারিক জীবন অন্যের কাছে অনুকরণীয় হতে হবে। সমাজের মানুষের কাছে জামায়াতে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আচার-ব্যবহার মাধুর্য্যপূর্ণ হতে হবে। অনাচার পাপাচারে ভরা জাহেলী জনগোষ্ঠীর সামনে প্রিয় রাসূল (সা.) চারিত্রিক মাধুর্য্যতা দিয়ে তাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদেরকেও তেমন চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতকে উৎখাত করে এই জমিনে মহান আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে নিজের জান-মালের কুরবানী পেশ করে ইসলামী আন্দোলনের সত্যিকার কর্মী হওয়া। প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করছি। এ কাজ সহজ নয়, সকল যুগেই ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিলো একথা সত্য। বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামী কোনো ফাঁকা মাঠে গোল দেবার চিন্তা করে না। রাজনৈতিক পরিসরে এখানেও আমাদের শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস পড়ে আমরা জেনেছি, যুগে যুগে নবী রাসূল আম্বিয়ায়ে কেরামগণ তাদের সময়ে শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই ইকামাতে দ্বীনের বিজয় নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এখানে আমরা আল্লাহ তায়ালার দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখি। এখানকার মাঠ পরিচ্ছন্ন করেই আমাদেরকে ইসলামী আদর্শকে বিজয়ী করতে হবে। এখানে মুসলিম সমাজে শিরক, নাস্তিক্যবাদ ও মানবরচিত যত মতবাদ রয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা গুটি কয়েক মানুষ আল্লাহর গোলাম হিসেবে লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি। পুরো শিকড় সহ আমরা এই জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করতে চাই। পরবর্তীতে এই সমাজ পরিচালনায় কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বত্র চালু রাখার ব্যবস্থা করতে চাই। মহান আল্লাহ তার কিতাব দিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের জীবনের প্রকৃত কল্যাণ ও সফলতার দিকনির্দেশনা এখানে রয়েছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের পরিচালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিািথ ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম ও মুহাদ্দিস রবিউল বাশার।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজৗ, অফিস সেক্রেটারি মীম মিরাজ হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা আলমগীর, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, মাওলানা শেখ মো. অলিউল্লাহ, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমীর জি এম শহীদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা আমীর মাওলানা মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মাওলানা নিয়াজ আনসারী, লবণচরা থানা আমীর মো. মোজাফ্ফর হোসেন, হরিণটানা থানা আমীর মাওলানা আব্দুল গফুর প্রমুখ।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত