নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার টগরের মোড়ে (পাঁজরভাঙ্গা - জলছত্র আঞ্চলিক সড়কে) এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিদুজ্জামান সোহান, সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, সদস্য নূরুল ইসলামসহ অন্যরা।

বক্তারা অভিযোগ করেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তারা বলেন, “দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হলে তা হবে দলের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।”

নেতাকর্মীরা দ্রুত মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বলেন, “দীর্ঘদিনের কারাবন্দি, সৎ ও যোগ্য নেতা এম এ মতীনকেই এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী করা হোক।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এম এ মতীন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি বহুবার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে তিনি ত্যাগী ও সংগঠক নেতা হিসেবে পরিচিত।

গত ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নওগাঁ-৪ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।

এর পর থেকেই এলাকায় দেখা দিয়েছে ভিন্নমত। একপক্ষে এম এ মতীনের সমর্থকদের পুনর্বিবেচনার দাবি, অন্যপক্ষে টিপুর মনোনয়ন ঘিরে উচ্ছ্বাস।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের আপত্তি অব্যাহত থাকলে মান্দায় বিএনপির সাংগঠনিক ঐক্যে টান পড়তে পারে।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর মান্দা উপজেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. টিপুর বিরুদ্ধে “দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের” অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতীনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নেতারা অভিযোগ করেন, ডা. টিপু অতীতে সংস্কারপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে বিকল্পধারায় যোগ দেন এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এম এ মতীনের নেতৃত্বে মান্দা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না হলে তৃণমূল বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তাদের মতে, “মান্দার মাঠের রাজনীতিতে যিনি সবসময় সক্রিয়, যিনি দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেছেন—তেমন নেতাকেই প্রার্থী করা হলে বিএনপি এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে।”

এর আগে ৪ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার ফেরিঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় (নওগাঁ–রাজশাহী মহাসড়কে) উপজেলা বিএনপির ব্যানারে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। অপরদিকে, গত ৯ নভেম্বর ৩নং পরানপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগেও এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের সকলের দাবি একই।