মাদারীপুর সরকারি কলেজের বারান্দায় বসে মাদকসেবনের প্রতিবাদ করায় ইকবাল আমিন ওরফে সম্রাট (২০) নামে এক শিক্ষার্থীকে বুধবার বিকেলে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবি আদায়ে প্রায় এক ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কে সব ধরণের যানবাহন চলাচর বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মাদারীপুর শহরের কলেজ গেটে এলাকায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিকে মহাসড়ক অবরোধ করায় সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল হোসেন ও কলেজের অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান খান ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। বহিরাগতদের হামলায় আহত শিক্ষার্থী ইকবাল আমিনকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া এলাকায়।
সাধারণ শিক্ষার্থী, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর কয়েকজন বহিরাগত যুবক কলেজের বারান্দায় প্রবেশ করে মাদক সেবন করছিল। এর প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থী ইকবালসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এই ঘটনার জেরে ইকবাল বুধবার বিকেলে কলেজ মাঠে খেলতে গেলে তাকে একা পেয়ে বেদম মারধর করেন বহিরাগত কয়েকজন যুবক। পরে গুরতর আহত অবস্থায় তাকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন তার সহপাঠীরা। এরপরেই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও কলেজ প্রঙ্গনে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ, সীমানা নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে কলেজের সংযোগ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা কলেজ গেটে অবস্থান নিয়ে মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায় কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও।
মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে। কলেজের পকেট গেটগুলো বন্ধ করা হবে। অতিদ্রুত সীমানা নির্ধারণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করার সব ধরনের চেষ্টা করা হবে। কলেজের শিক্ষকেরা আহত ওই শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতেও সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান বলেন, কলেজে সন্ধ্যার পরে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। আজ হলের এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হলো। কলেজ প্রশাসন প্রথমে চুপচাপ ছিল। পরে আন্দোলন জোড়ালো হলে কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি আদায়ে আশ্বস্ত করায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে আবারো অবরোধের ডাক দেয়া হবে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত থাকতে অনুরোধ জানায়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের দাবি মেনে নিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।