নয়াপল্টনের বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, কোন কোন এলাকায় কারা কারা বিএনপি কর্মীদের নির্যাতন করছে, তার তালিকা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে নামলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান মঙ্গলবার নয়াপল্টনের সমাবেশে এই সতর্কতা দেন।
গত শনিবারের সমাবেশের তিন দিন আগে নয়াপল্টনে পুলিশের পর সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার এই বিক্ষোভ হয়। দুপুর দুইটার দিকে সমাবেশটি হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার দিকেই নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন নয়াপল্টনে। সমাবেল শুরুর পর তাদের ভিড় একদিনে নাইটিঙ্গেল মোড়, একদিনে ফকিরাপুলের দিকে চলে যায়।
গত ৭ ডিসেম্বর সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে সমাবেশের প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনীদের বলতে চাই আপনারা জনগণের শত্রু নন। আপনারা শপথ নিয়েছে এদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। আপনারা জনগণের শত্রু না। পুলিশকে স্মরণ করে দিতে চাই, আপনারা কোনো দলীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। ‘সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। তারা চলে যাবে। কিন্তু আপনারা থাকবেন। সুতরাং আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় অফিস ৭ ডিসেম্বর যে বর্বর হামলা হয়েছে তা নজিরবিহীন। অফিসে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। অফিসের সব কিছু নিয়ে গেছে। এর নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই।’ আপনারা আমাদের কোন কোন এলাকার নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছেন, সব কিছুর লিস্ট আছে। শেখ হাসিনা অবশ্যই ক্ষমতা থেকে নামবেন। তাইা নিরেপক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন।’ মোশাররফ বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের দিন আপনারা ছিলেন। এত বাধা বিপত্তি, এত গ্রেপ্তারের পরও আমাদের সমাবেশ মহাসবেশে, গণসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
‘আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সরকার মনে করেছিল তারা আমাদের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ব্যর্থ করে দিবে। তারা ব্যর্থ করতে পারে নাই। এ দেশের জনগণ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তি সেদিন ১০ ডিসেম্বর জয়ী হয়েছে। তারা পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, গায়ের জোরে টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে নির্দেশ দিয়ে এ দেশের জনগণের উপর লেলিয়ে দিয়েছে। এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলকে দুর্বল করতে পারে নাই৷ যদি দুর্বল হতো, তাহলে ১০ টি সমাবেশ সফল করতে পারতাম না।’
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ জনগণও এসেছে দাবি করে মোশারফ বলেন, ‘জনগণ এসে আমাদের সমাবেশ সফল করেছে। সাধারণ জনগণ এই সমাবেশ গুলোর মধ্য দিয়ে বার্তা দিয়েছে এই সরকারের হাত থেকে জনগণ মুক্তি চায়। আর এই মুক্তি দিতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই লক্ষ্যে ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ থেকে ১০ দফা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছি।’ সভাপতির বক্তব্য আমানউল্লাহ আমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুঁশিয়ার করে দেন। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করছি, নিরপেক্ষ থাকুক। আপনার পরিবারের সদস্যরাও কষ্ট পাচ্ছে চাল-ডালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে। আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, জোর করে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রহুল কবির রিজভীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে ভেবেছিল আমাদের সমাবেশ নষ্ট করবেন। আওয়ামী নেতাদের বলতে চাই, মনে রাখবেন বিএনপি ভেসে আছে আসে নাই। বিএনপি রাজপথ আছে। রাজপথে থাকবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়েছে, প্রয়োজনে আরও দিবে। শেখ হাসিনার নির্বাচন হতে দেয়া যাবে না।’
ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের আবুল খায়ের ভূঁইয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমুদ্দিন আলম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরবও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
বাবু/জেএম