শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫ ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে প্রয়োজন সচেতনতা
নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪২ PM
ভোক্তা অধিকার শব্দটির সাথে আমরা সকলেই মিশে আছি কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই অধিকার সম্পর্কে আমাদের ধারণাই নেই। বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। সকলেই সুন্দরভাবে বাঁচতে চায় তবে সমস্যাটা হলো নিজের বেলায়। আমরা কিন্তু ভেবে দেখি না যে আমরা সকলেই ভোক্তা। অনেকের ধারণা কেবলমাত্র ভোক্তা-অধিকার পণ্য ক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ আসলে বিষয়টি এমন নয়। তবে পণ্য ক্রয়ের বেলায় সরাসরি প্রভাব পড়ার সময় বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে না জানার কারনে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকার ২০০৯ সালে ৬ এপ্রিল একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনে অভিযোগ দায়ের, ভোক্ত-অধিকার বিরোধী কার্য ও অপরাধ এবং দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি পর্যালোচনা করলে ভোক্তা যেমন তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে অন্যদিকে আইনের মাধ্যমে প্রতিকার লাভ করবে। তাই এ আইনটি সম্পর্কে ভোক্তাদের জানা একান্ত অপরিহার্য। সরকারি সংস্থা ও ভোক্তারা সোচ্চার না হলে আইনের সুফল পাওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে আলোচনা করার পূর্বে জানা দরকার, ভোক্তা কারা? ভোক্তা হলো কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি কোন ব্যক্তি হকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করেন এবং তার উপযোগ নিঃশেষ করেন। মূলকথা হলো ভোক্তা হচ্ছে ক্রয়কৃত পণ্যের চূড়ান্ত ব্যবহারকারী। সত্য কথা হলো প্রত্যেকটি মানুষই  কোনো না কোনো পর্যায়ে ভোক্তা। বেকলমাত্র পণ্য ক্রয় কারীকেই ভোক্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আইনে তথ্য পাওয়ার অধিকারটিকে গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। তাই প্রত্যেকটি পণ্য বা সেবা সম্পর্কে প্রত্যেকটি ভোক্তার জানার দরকার রয়েছে তেমনি জানার অধিকারও রয়েছে। আইন অনুযায়ী অধিকারের মধ্যে রয়েছে মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকার, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, পছন্দের অধিকার, জানার অধিকার, অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, ভোক্তা-অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার এবং সুস্থ পরিবেশের অধিকার। এই অধিকারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ বিষয় সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার বাইরে এবং আগ্রহও কম রয়েছে তাই অনেকেই কেবলমাত্র এটিকে কেবল পণ্য ক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। বিষয়টি আদৌ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

এ আইনের উদ্দেশ্যগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে এর প্রয়োজনীযতা সম্পর্কে আরো জ্ঞানলাভের সুযোগ হবে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ, ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি, নিরাপদ পণ্য বা সেবা নিশ্চিতকরণ, পণ্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধ, ভোক্তা- অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির মতো জনসাধারণের অনুকূলের কথা বলা হয়েছে। এই অধিকার এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ভোক্তার দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনটি তখনই সফল হবে যদি ভোক্তা তার কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে থাকে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণের সুফল সম্পর্কে জানা, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যের কুফল সম্পর্কে জানা, যাচাই-বাছাই করে সঠিক পণ্য বা সেবা সঠিক মূল্যে কেনা, ভোক্তা- অধিকার বাস্তবায়নে সংগঠিত ও সোচ্চার হওয়া এবং অভিযোগ দায়ের করার মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। এছাড়াও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য ও অপরাধ কার্যক্রম সম্পর্কেও সচেতনতা প্রয়োজন।

বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম পণ্যের মোড়ক ইত্যাদি ব্যবহার না করা, মূল্য তালিকা প্রকাশ না করা, সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রয়, ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা, প্রতিশ্রুতি পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা, ওজনে কারচুপি, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি, পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য, অবহেলা, ইত্যাদি দ্বারা সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য, জীবনহানি, ইত্যাদি ঘটানো, মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের, অপরাধ পুনঃসংঘটন, বাজেয়াপ্তকরণ।

এসব অপরাধের জন্য কোনো ভোক্তা, একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা, কোন আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোন ভোক্তা সংস্থা, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা উহার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা, সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ী অভিযোগকারী হতে পারেন। আইন অনুযায়ী কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আইনে উল্লেখিত স্থানে লিখিত আকারে অভিযোগ জানানোর বিধান রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে এমনকি জরিমানা আরোপ করা হলে আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে উক্ত আইনে। আইন যাদের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে তাদের আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে সে আইনের সঠিক ফল পাওয়া কখনও সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি মানুষ রাষ্ট থেকে এ অধিকারটুকু পাবে এটা স্বীকৃত। তাই রাষ্ট্রকে এ আইন প্রয়োগে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বাড়াতে হবে জনসচেতনতা।

লেখক  : সাবেক সভাপতি, ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাব

বাবু/জেএম

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত