শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
ভালোবাসার সম্পর্ক রক্ষায় সচেতন হোন
প্রদীপ সাহা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৪২ PM
‘ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী/ভালোবাসা হলো নিঃশ্বাস এ দেহের/ নিঃশ্বাস বিনা মানুষ কখনো বাঁচে কী?’ কিশোর কুমারের বিখ্যাত এ গানটিই বলে দেয় ব্যক্তিজীবনে ভালোবাসার প্রয়োজন কতটুকু। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক ব্যাপার। ভালোবাসা ছাড়া প্রাণিজগতের বেঁচে থাকার কথা চিন্তাই করা যায় না। ভালোবাসার সংজ্ঞাটি বিতর্ক, অনুমান এবং অন্তর্দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাধারণভাবে ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ভালোবাসাকে নিয়ে রচিত হয়েছে হাজার হাজার গান, কবিতা ও গল্প।

ভালোবাসাকে সামনে রেখে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার সম্পর্ক পৃথিবীতে ছিল, আছে এবং থাকবেও অনন্তকাল। ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়। বিশেষ কারো সঙ্গে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এ ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। ‘ভালোবাসা’ এবং ‘ভালোলাগা’ শব্দ দু’টি একইরকম মনে হলেও অনেকটা গোলমেলে বা বিভ্রান্তিকর। ভালোলাগা ছাড়া ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা ছাড়া প্রেম হয় না কিন্তু প্রেম না হলেও ভালোবাসা হতে পারে। ভালোলাগাটা প্রাথমিক পর্যায়, প্রেমের পর্যায়টা চূড়ান্ত। অন্যভাবে বলা যায় ভালোবাসার ব্যাপারটা হলো কারণ, আর প্রেমটা ফল। 

প্রেম বিশেষজ্ঞ হেলেন ফিশার প্রেম বা ভালোবাসার অভিজ্ঞতাকে তিনটি আংশিক ওভারল্যাপিং পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন কামনা, আকর্ষণ এবং সংযুক্তি। কামনা হলো যৌন বাসনার প্রাথমিক ধাপ যা টেস্টোস্টাইন এবং এস্ট্রোজেনের মতো রাসায়নিক পদার্থ বেশি মাত্রায় ত্যাগ করে। এর প্রভাব কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আকর্ষণ আরও স্বতন্ত্র এবং রোমান্টিক হয় একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর জন্য, যার মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র লালসা বিকশিত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার মস্তিষ্ক নিয়মিত নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন এবং সেরোটোনিন রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে। এর ফলে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, হার্টের কম্পন বৃদ্ধি পায়, ক্ষুধা এবং ঘুম হ্রাস পায় এবং উত্তেজনা বেড়ে যায়। এ পর্যায় সাধারণত দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যেহেতু কামনা এবং আকর্ষণের পর্যায়গুলোকে অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য একটি তৃতীয় পর্যায় প্রয়োজন। আর তা হলো সংযুক্তি। সংযুক্তি হলো এক ধরনের বন্ধন, যার কারণে সম্পর্ক অনেক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সংযুক্তি সাধারণভাবে বিবাহ বা শিশু জন্মদান করার মতো অঙ্গীকারগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পছন্দের বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়ার কারণেও সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কেউ প্রথম প্রেমে পড়ে তখন এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এক বছর পর তা আবার পূর্ববর্তী স্তরে ফিরে আসে।

ভালোবাসা হলো এক অর্থে দুই স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ভালোবাসা কোনোভাবেই মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে নেই। এর ফলে একসময় আপনি আপনার মনের মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারেন। ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সবাই ভালোবাসে, সবাই প্রেমে পড়ে। কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গি সবার একরকম হয় না। ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে প্রথম উপায় হলো ভয় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা প্রকাশ করা। মনের মানুষটি কী পছন্দ করে, তা শিগগিরই খুঁজে বের করতে হবে। সেটা কোনো জিনিস হতে পারে, কোনো বিষয় হতে পারে, এমনকি খাবারও হতে পারে। পছন্দের জিনিসটি উপস্থাপন করে কিংবা উপহার দিয়ে ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে হবে এবং বুঝিয়ে দিতে হবে ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই। মানুষের ভালোবাসা প্রকাশ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে উপহার। মনের মানুষটির কাছে উপহার আপনার অনুভূতিকে বারবার প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।  

ভালোবাসার মানুষটিকে প্রতিটি কাজে উৎসাহ দিন, যাতে সে সাহস পায়। সব বিষয়ে আপনার উৎসাহ পেলে সে আপনার কাছে অন্যরকম স্বস্তি অনুভব করবে। আর আপনার ভালোবাসাও তার কাছে ধরা পড়বে। মনের মানুষটির চাহিদা অনুযায়ী কিছু একটা করার চেষ্টা করুন, এতে আপনার ভালোবাসাটা প্রকাশ পাবে। মনের মানুষটির কাছে নিজেকে প্রকাশ করুন। সামনাসামনি কথা বলার অনুভূতিটাই অন্যরকম। তাই একবারের জন্য হলেও তাকে সামনাসামনি বলার চেষ্টা করুন আপনি তাকে ভালোবাসেন। ‘সম্পর্ক’ ও ‘ভালোবাসা’ শব্দ দু’টি একসঙ্গে জড়িত। ভালোবাসে সবাই। কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে ক’জন? ভারসাম্যপূর্ণ রোমান্টিক জীবন গড়ে তোলা ও সম্পর্ক গভীরতর করা কঠিন কিছু নয়। অনেক সময় সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে সহজেই ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। ভালোবাসার সম্পর্ককে ঠিক রাখার জন্য কিংবা ধরে রাখার জন্য আপনাকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। 

নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং খুব কাছের বন্ধু হিসেবে তাকে সবকিছু জানতে দিন। দেখবেন সে-ও তার নিজের দুর্বলতাগুলো আপনার কাছে তুলে ধরছে। এতে সম্পর্ক গাঢ় হবে। জীবনে নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত থাকে। সেই সংকটের মুহূর্তে দৃঢ়তা নিয়ে সঙ্গীর পাশে দাঁড়ান। আপনার সরলতা আপনার সঙ্গীকে আরও কাছে টানবে। নিজের মতো করে আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন না। এতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ প্রত্যেক মানুষেরই থাকে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব। আপনি যদি সবসময় আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে দুর্ভাবনায় থাকেন, তা আপনার সঙ্গীকে দূরে সরিয়ে দেবে। কাজেই কোনোকিছু না বুঝে কিংবা না জেনে ভালোবাসার মানুষটিকে সন্দেহ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। ভালোবাসার সম্পর্ক যেমন গভীর, তেমনি ঠুনকো। সামান্য সন্দেহ কিংবা সামান্য কোনো কারণে ভালোবাসার সম্পর্কটা যেন ফাটল না ধরে, সে ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। খুব ভালো করে জানতে হবে, বুঝতে হবে আপনার কাছের মানুষটিকে তবেই না দু’জনের ভালোবাসার সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হবে।    

লেখক : কলামিস্ট
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  ভালোবাসা   সচেতন  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত