ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো শান্তি চুক্তি করেবেন না বলে জানিয়েছেন। রুশ অভিযানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ভূখণ্ড ছাড় দেয়ার অর্থ হবে রাশিয়া আবারও দখলের জন্য ফিরে আসতে পারে। অন্যদিকে পশ্চিমা অস্ত্র শান্তির কাছাকাছি নিয়ে যাবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা আপসের কথা নয়। আমরা কেন আপস করতে ভয় পাব? প্রতিদিনের জীবনে আমাদের অনেক আপস করে চলতে হয়। প্রশ্ন হলো, আপসটা কাদের সঙ্গে? পুতিনের সঙ্গে? না। কারণ, সেখানে বিশ্বাস নেই। পুতিনের সঙ্গে আলোচনা? না। কারণ, বিশ্বাস নেই।’ রাশিয়া বসন্তে হামলার যে আভাস দিয়েছিল, তা এর মধ্যেই শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালাচ্ছে তারা।
জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আরও অস্ত্র সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু অস্ত্রের মাধ্যমেই শান্তি আনা সম্ভব। অবশ্যই আধুনিক অস্ত্র শান্তি ত্বরান্বিত করবে। অস্ত্রই একমাত্র ভাষা, যেটি রাশিয়া বোঝে।’
তবে পশ্চিমাদের ধীরগতিতে অস্ত্র দেয়ায় কিয়েভের হতাশা বাড়ছে। গত মাসে ইউক্রেনে যুদ্ধের ট্যাংক সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ট্যাংকগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছাতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
সাক্ষাৎকারে বেলারুশের হুমকির বিষয়েও কথা বলেছেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘যদি ইউক্রেনের একজন সেনাও বেলারুশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে আমার দেশের জনগণকে হত্যা করে, তাহলেই কেবল রাশিয়ার হয়ে বেলারুশের ভূখণ্ড থেকে আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
এ হুমকির কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি আশা করি, বেলারুশ (যুদ্ধে) যোগ দেবে না। যদি তারা (বেলারুশ) এমনটা করে, তাহলে আমরা লড়াই করব। আমরা টিকে থাকব।’ হামলার জন্য রাশিয়া যদি বেলারুশকে ব্যবহার করে তাহলে ‘বড় ভুল’ করবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউক্রেনের পরিসংখ্যান বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম সপ্তাহের পর চলতি মাসে সবচেয়ে বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেন সরকারের দেয়া তথ্যের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধে প্রতিদিন গড়ে ৮২৪ রুশ সেনা নিহত হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলছে, রুশ সৈন্য নিহতের পরিসংখ্যান ‘প্রায় সঠিক’। তবে এ সংখ্যার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমাদের টিকে থাকাই আমাদের ঐক্য। আমি বিশ্বাস করি ইউক্রেন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। অর্থনৈতিকভাবে এবং মূল্যবোধের দিক দিয়ে ইউক্রেন ইউরোপের পথে হাঁটছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এই পথ বেছে নিয়েছি। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। কোনো অঞ্চল নিয়ে সমঝোতায় গেলে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ব।’
বাবু/এ আর