রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫ ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
গ্রেড বৈষম্যের নিরসন হওয়া জরুরি
নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার
প্রকাশ: রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩, ৪:২৮ PM

বেতন বৈষম্য নিয়ে কথা বলার আগে বর্তমান বাজারব্যবস্থা নিয়ে কিছুটা কথা বলে নেওয়া জরুরি। লাগামহীণ বাজারব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের। বাজার ব্যবস্থার সাথে বেতন কাঠামোর একটা সামঞ্জস্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে বাজার ব্যবস্থার সাথে কোনোভাবেই তাল মেলাতে পারছে না তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। যতদিন যাচ্ছে লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলছে দ্রব্যমূল্যের দাম স্তর। হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে কর্মচারীদের সাথে সাথে সাধারণ মানুষও। সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উপায় মিলছে না কোনো কিছুতেই। সরকারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পূর্বেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বাজার মূল্য। আবার মাঝে মাঝে দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে সরকার যখন নির্ধারণ করে সাধারণ জনগণ তা থেকে সুবিধা পায় না ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে। ব্যবসায়ীরা বিশ্ব বাজারের দোহাই দিয়ে প্রতিনিয়ত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে চলছে। যেন চলছে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। ব্যবসায়ীদের এ সিন্ডিকেট ভাঙ্গার সাধ্য যেন কারো নেই। এ সমস্যা সমাধানের কোনো পথও সামনে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি ও আমাদের নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থাতে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মধ্যবিত্তরা। যাদের প্রতিনিয়ত আয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আরো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সরকারি চাকুরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। সরকারি চাকুরি সোনার হরিণ কারণ এ চাকুরির রয়েছে নিশ্চয়তা। আগে যখনই বাজেট আসতো তখন চলত ভিন্ন রকমের প্রতিযোগিতা। যে যার মতো পণ্যের মজুদ বাড়িয়ে জনগণের কাছ থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাতো। এখন ব্যবসায়ীরা আর বাজেটের অপেক্ষা করে না সারাবছরই পণ্যের দাম নিয়ে করে নয়-ছয়। একদিকে করোনা পরবর্তী বিশ্ব অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একেবারে ব্যাটে বলে মিলে গেছে ব্যবসায়ীদের। আবার সামনে নির্বাচন তাই মনে হয় সরকারের না দেখার ভান। বারবার বিভিন্ন পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করার কথা বলা হলেও বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে দেশে পণ্যের দাম বাড়ানো হয় কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলে সেভাবে আর দেশে কমানো হয় না। এসব কারণে প্রতিনিয়তই বাজার ব্যবস্থাপনা অস্থিতিশীল হচ্ছে। যার বলি হচ্ছে নিম্নস্তরের সাধারণ জনগণ। এই মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার সাথে মিলে যাচ্ছে সরকারের বেতনবুক্ত ১১-২০ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বেতন কাঠামো।

১১ থেকে ২০তম গ্রেডের পার্থক্যটা দেখলে বুঝা যাবে সত্যিকার অর্থেই এসব গ্রেডের কর্মচারীদের কোনো চাকুরীজীবি হিসেবেই দেখা হয়নি। ১১ থেকে ১২ তম গ্রেডের পার্থক্য ১২শ টাকা, ১২ থেকে ১৩তম গ্রেডের পার্থক্য ৩শ টাকা, ১৩ থেকে ১৪তম গ্রেডের পার্থক্য ৮শ টাকা, ১৪ থেকে ১৫তম গ্রেডের পার্থক্য ৫শ টাকা, ১৫ থেকে ১৬ তম গ্রেডের পার্থক্য ৪শ টাকা, ১৬ থেকে ১৭তম গ্রেডের পার্থক্য ৩শ টাকা, ১৭ থেকে ১৮তম গ্রেডের পার্থক্য ২শ টাকা, ১৮ থেকে ১৯তম গ্রেডের পার্থক্য ৩শ টাকা ও ১৯ থেকে ২০ তম গ্রেডের পার্থক্য ২শ টাকা। সরকারি চাকুরিতে এখনও ৪টি শ্রেণি বিদ্যমান রয়েছে যা ২০টি গ্রেডে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ১ম থেকে ৯ম গ্রেড প্রথম শ্রেণি, ১০ গ্রেড ২য় শ্রেণি, ১১- ১৬ গ্রেড তৃতীয় শ্রেণি ও ১৭-২০ থেকে চতুর্থ শ্রেণি। প্রতিবারই বাজেট দেওয়ার সময় চেয়ে থাকে একটু সুযোগ-সুবিধা বাড়বে বলে। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা একটু বেশিই প্রত্যাশা করে থাকে কারণ তাদের বেতন স্কেলটি নিয়ে সবসময় হতাশায় থাকে। কিন্তু প্রতিবারই সে আশায় গুঁড়েবালি। বর্তমানে ২০১৫ সালের ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা মূল বেতন চালু রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ভাগ করা হলেও নিম্নস্তরের কর্মচারীদের যেসব স্কেল প্রদান করা হয়েছে তা হতাশাজনক। সরকার ইতোমধ্যে বৈশাখী ভাতা এবং শিক্ষাভাতা চালু করেছে যা নিম্নস্তরের কর্মজীবিদের আশার সঞ্চার করেছে। বাজেটের আগে শুনা গিয়েছিল প্রতি বছরের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর সাথে মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে প্রণোদনা প্রদান করা হবে।

কাগজেপত্রে মুদ্রস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হলেও বাজার ব্যবস্থার সাথে একেবারেই মিল নেই। নিম্ন গ্রেডভূক্ত কর্মচারীরা এ প্রাপ্তিতে হতাশ হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালের বেতন স্কেলের পর পুনরায় নতুন স্কেল প্রদানের দাবি উঠেছে। আগে প্রতি ৫ বছর পর পর স্কেল দেওয়ার কারনে সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তারা লাভবান হতেন বেশি। কারণ প্রতি ৫ বছর পর পর স্কেল প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেত। বর্তমানে প্রতি বছর বছর ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে আগের মতো আর বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস ওয়েব সাইটের পাওয়া তথ্য থেকে বিভিন্ন দেশের বেতন স্কেলের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাংলাদেশের স্কেলের গ্রেড সংখ্যা আন্তর্জাতিক মানের। উচু ও নিচু গ্রেডে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু যে পরিমাণ ব্যবধান রাখা হয়েছে তা রীতিমতো হতাশা তৈরি করছে। তাই উচিত এসব বেতন স্কেলের বৈষম্য দূরীকরণ করা। খুব দ্রুত এসব বৈষম্য দূর করতে না পারলে টাইম স্কেল বাড়ানো, সিলেকশন গ্রেড প্রদান, ইবিক্রস, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, রেশন ব্যবস্থা চালু করা এবং বাড়ি তৈরির জন্য সহজ শর্তে অধিক পরিমাণে ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। কারণ প্রতিটি দপ্তরে প্রায় সকল কাজই বাস্তবায়ন করে থাকে এইসব গ্রেডভূক্ত কর্মচারীরা । সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। ফলে কর্মচারীদের মাঝে তৈরি হয়েছে এক প্রকার হতাশা। এই প্রণোদনা প্রদান বর্তমান জীবনমানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই মনে হয়। দীর্ঘদিন যাবত স্কেল প্রদান না করার ফলে আগের মতো আর বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রেষণা প্রদানের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে বেতন বৃদ্ধি। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে আয় না বাড়ার কারনে হতাশ হয়ে পড়েছে নিম্ন বেতনের কর্মচারীরা যার ফলে কাজের বেলায়ও প্রভাব পড়ছে। তাই সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা এখন সময়ের দাবি। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এইসব কর্মচারীদের শ্রমের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত