পরে যখন দেখল যে মুক্তিকামী বাঙালিকে কখনোই দাবিয়ে রাখা যাবে না, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় অবশ্যম্ভাবী, সে সময়েই তারা নতুন অপকৌশল অবলম্বন করল। বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশার মাধ্যমে তারা এ দেশকে মননে ও প্রগতিশীলতায় পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হোতা হিসেবে তারা আমাদের দেশের ওপর বিষফোঁড়া হয়েই বসে রইল। বিভিন্ন সময়ে তারা তাদের দোসরদের নিয়ে এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, দেশটিকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছে। দেশপ্রেমী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের বিপক্ষে নানা ধরনের অপচেষ্টা অপপ্রয়াসে সক্রিয় থেকেছে। বলাবাহুল্য, তাদের পরম দোসর বিএনপি সব সময়েই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থাৎ প্রকাশ্যে ও গোপনে জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। 

বর্তমানে দেশের এই নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে বিএনপি যতোটা এগোতে পারছে তার চেয়ে বেশি এগোচ্ছে জামায়াত। কারণ তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের আবেগ-আপ্লুত মনোভাব  মোটেই নেই। যার ফলে প্রতিনিয়ত হরতাল অবরোধ বেনামিতে রাস্তায় গাড়ি জ্বালাও, জীবন নিঃস্ব করা থেকে শুরু করে কোনোটাই বাদ রাখছে না এই জামায়াত। আসলে এতে দেখা যাচ্ছে দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী গোপনে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা শুরু করেছে জামায়াত-শিবির, সাথে বিএনপিও রয়েছে। বড় ধরনের নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা চালানোর পরিকল্পনা করে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে যুদ্ধাপরাধীর এই দলটি। 

এই দলটির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির একাংশ, উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গী গোষ্ঠীর। এই ধরনের অপতৎপরতায় মদদ যোগাচ্ছে দেশি-বিদেশি অশুভ শক্তি, বিশেষ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগ আছেÑ এমন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করছে গোয়েন্দা সংস্থা। সাম্প্রতিককালে ধর্মের দোহাই দিয়ে কিছু অপতৎপরতা সংঘটিত হয়েছে দেশে যার প্রচার প্রচারণায় ছিল মুখ্য জামায়াত শিবির। এসবের পেছনে জামায়াতের হাত না থাকার কোন কারণ নেই। ২০১৪ সালের কিছু ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে, রংপুরের লালমনিরহাটে একজন ধর্মভীরু মুসলমানকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা ও কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলেই প্রতীয়মান হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে জামায়াতের মজলিশে শুরার এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনাসহ নানা ধরনের ব্যর্থতা তুলে ধরার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জনসংযোগ বৃদ্ধি করে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূশিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার পর থেকে সারাদেশের কোথাও না কোথাও ঝটিকা মিছিল, কর্মী সমাবেশ করছে সংগঠনটির তৃণমূল পর্যায়ে। 

গত কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী লাগাতার সাঁড়াশি অভিযানের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া নিষ্ক্রিয় জঙ্গি সংগঠনের নেটওয়ার্ক পুনরায় চাঙ্গা করতে মরিয়া জামায়াত-শিবির। দেশের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মনে করে জামায়াত কখনোই এ দেশের ভাল চাইবে না, তারা সব সময়েই দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে বিব্রত করা, বিপাকে ফেলার নানা অপতৎপরতা তারা সব সময়েই চালিয়ে যাবে। তাই এখন সময় এসেছে এদের কঠোর হাতে দমনের। যখনই যেখানেই তারা আইনবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হবে, তৎক্ষণাতই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে জনবল বাড়িয়ে তাদের ওপর বিশেষ নজরদারি করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের পরম দোসর বিএনপির প্রকাশ্য ও গোপন আইনবিরোধী অপপ্রয়াসের সমুচিত জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সজাগ থাকতে হবে বর্তমান সরকারের মাঠ পর্যায়ের সকল শ্রেণির নেতাকর্মীকে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে এসব বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার কোন বিকল্প নেই। এদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে দেশের সার্বিক উন্নতি করতে চাইলে বর্তমান সরকার ব্যতিত অন্য কোনো সরকারের বিকল্প নেই। বিগত কবছরে আমাদের দেশের যে পরিমাণ উন্নতির পরিবেশ দৃশ্যমান হয়েছে তাতে এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।