অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:৪৮ PM
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই দুই মাসে সারা দেশে কমপক্ষে ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আইনজীবী ও রাজনীতিবিদেরা বলছেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া যেকোনো হত্যাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং এসবের দায় সরকারকে নিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের। তবে মাত্র তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুলিশ সদর দপ্তরের দাবি, তারা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের দীঘিনালার ঘটনার পর গত মঙ্গলবার পাহাড়ে আরও একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তারপরও সংঘর্ষ এবং বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর জের ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিহত হন। অনেক ঘরবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় অনেক বাড়ি-ঘর।
মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে। দুই মাসেও তারা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারছে না—এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির নানা ধরনের দায়িত্বহীন কথাও পরিস্থিতি খারাপ করছে।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বের দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে মারা হয় দুজনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে চোর অপবাদে দিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পঙ্গু সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। এদিকে চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নাচ-গান করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার এক মাস পর সেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আসক বলছে, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর—চলতি বছরের এই ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৮১ জনকে গণপিটুনিতে বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে আগস্টে ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে, আর ২৮ জনকে সেপ্টেম্বরে হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই দুই মাসে ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আগের সাত মাসে এমন ঘটনা অনেক কম। ওই সাত মাসে মাত্র ৩১ জনের মৃত্যু হয় গণপিটুনিতে।
এছাড়াও, গণপিটুনির বাইরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হেফাজতেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হেফাজতে।
তবে নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের দাবি— ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যার ঘটনা ঘটেনি।