যশোরের আট উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্যমান কমিটি ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্র থেকে এক সপ্তাহ আগে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সমস্যা বেঁধেছে, এই পাঁচ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ নেই। নতুন করে সম্মেলন না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
এই পাঁচটি উপজেলা হলো যশোর সদর, ঝিকরগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও মনিরামপুর। এসব উপজেলায় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি হয়। সে সময় প্রতিটি উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেননি কেউ। উল্টো পুরো মেয়াদকালেও কেউ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি।
এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারছে না উপজেলাগুলোতে। তৃণমূলের দাবি মেনে সম্মেলন না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদের মাধ্যমেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নামে পুরোনোদেরই আরও কয়েক বছর নেতৃত্বে থাকার বন্দোবস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে নতুন নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সমালোচক হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ হতে যাওয়া কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
কমিটি পূর্ণাঙ্গের সিদ্ধান্তে নাখোশ নেতা-কর্মীরা জানান, ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি ও মুছা মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন বছর মেয়াদি কমিটি ৮ বছর ২ মাসেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। ১ ফেব্রুয়ারি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে যশোর সার্কিট হাউসে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
২০১৪ সালে ২৮ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কাজী মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি ও গোলাম মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগেই ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর গোলাম মোস্তফা মারা যান। এরপর ২০১৮ সালের ১০ মার্চ কাজী মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি ও প্রভাষক ফারুক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চার সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিও আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এনামুল হককে সভাপতি ও সরদার অলিয়ার রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটি মেয়াদ পেরিয়েছে আড়াই মাস আগেই। পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি।
২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর সম্মেলনে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ ও সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম নির্বাচিত হন। দুই সদস্যের এ কমিটিও মেয়াদ পেরিয়েছে আড়াই মাস আগে। তাঁদের নেতৃত্বে আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি।
২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়কে সভাপতি ও হাসান আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। মেয়াদকালে পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি।
আংশিক কমিটি গঠনের পর দুই দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এখন এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নেতারা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আমি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এখন সুদিনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো শীর্ষ পদে যেতে পারলাম না। আংশিক কমিটিতেই ৯ বছর পার হয়ে গেল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে পুরোনোরাই এভাবে হয়তো আরও ৯ বছর একই পদে থেকে যাওয়ার চিন্তা করবেন। তাহলে নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে কীভাবে?’
অভিযোগের বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আংশিক কমিটি গঠনের পর দুই দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পরে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের তাঁর দপ্তর ঢাকায় ডেকে নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে কমিটির তালিকা জমা দিতে বলেন। সেটাও করেছি। তারপরও কেন কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলো না, তা আমাদের জানা নেই।’
যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ বলেন, ‘মহামারি করোনার কারণে দুই বছর এবং সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদে তিনবার উপনির্বাচনের কারণে আড়াই বছরেও সদর উপজেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারিনি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলার সভাপতি-সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। কিন্তু কাউকে এক জায়গায় করতে না পারায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না।’
জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। ১ ফেব্রুয়ারি যশোর সদর, ঝিকরগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্র থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একক আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহারে দলে তৈরি হয়েছে তীব্র বিভক্তি ও দলবাজি। তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে না পারায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হচ্ছে সংগঠন।
গত বছরের ৩১ জুলাই যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলামের একার স্বাক্ষরে মনিরামপুর, ঝিকরগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের স্বাক্ষর ছিল না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিতর্ক শুরু হয়। পরে ২ আগস্ট দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এক জরুরি সভায় ‘একতরফা’ ওই কমিটি বাতিল করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি যশোর সদর, ঝিকরগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্র থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
সম্মেলনের দাবির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে উপজেলাগুলোর কমিটি গঠনে সম্মেলন করা হবে কি না, সেটা বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাবু/এ আর
টঙ্গীতে নৌকা ও ট্রাক সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
থার্টিফার্স্ট নাইটে এড়িয়ে চলতে হবে রাজধানীর যেসব সড়ক
সবার আগে নতুন বছরকে বরণ করলো নিউজিল্যান্ড
সকল আবর্জনা ট্রাকে তুলে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করতে এসেছি: লতিফ সিদ্দিকী
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
জাল ভোট হলে প্রিসাইডিং অফিসারের চাকরি থাকবে না
কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমণে বাংলাদেশ বুলেটিন পরিবার 
ঢাকায় অবস্থান করেও তিনি চাঁদপুরের মামলায় আসামী!
দেশকে দেউলিয়া ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে অবৈধ সরকার: রিজভী
