বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫ ১২ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল
টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৫:৩৬ PM আপডেট: ০১.০২.২০২৪ ৫:৪৭ PM
টঙ্গীর কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে (জুবায়েরপন্থি) মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। শুক্রবার বাদ ফজর মাওলানা আহম্মেদ বাটলা এর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমায় যোগ দিতে মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসছেন। কেউ বাসে, কেউ ট্রাকে, আবার কেউ পিকআপ ভ্যানে চড়ে এসেছেন ইজতেমা মাঠে। সবার হতেই একাধিক ব্যাগ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। মুসল্লিরা মাঠে ঢুকছেন ভিন্ন ভিন্ন ফটক দিয়ে। মাঠে ঢুকেই নিজ নিজ খিত্তায় (নির্ধারিত জায়গা) অবস্থান নিচ্ছেন মুসল্লিরা।

ইজতেমায় মুসল্লিদের ভিড়, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই লাখ লাখ মুসল্লিরা ময়দানে এসে নিজ নিজ খিত্তায় অংশ নিয়েছেন। যারা খিত্তায় স্থান পাননি তারা বাধ্য হয়ে ময়দানের বাউন্ডারির বাইরে চারপাশের খালি জায়গায় ইস্তেমিয় সীমানা নিয়ে বসে পড়েছেন। 

মুসল্লিরা জানায়, বুধবার রাতে ময়দানে গিয়ে দেখি পুরো খিত্তায় মুসল্লিতে ঠাসা। খিত্তায় জায়গা না পেয়ে ময়দানের বাইরে অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করে যাচ্ছি। ভোর রাতের বৃষ্টি ও দিনের বেলায় ধুলাবালিতে  ভোগান্তি হলেও আল্লাহকে খুশি করতে এখানে উপস্থিত হয়েছি।

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসেছেন ৩৭ দেশের বিদেশী মুসল্লি : বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৩৭ দেশের ৭শ ৮০ জন বিদেশি মেহমান ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন। উর্দু ৪শ ৩০ জন, আরবি ৭১ জন, ইংলিশ ২শ ৭৯ জন বিদেশি মুসল্রি ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন।

ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে নিরাপত্তায় র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মাহাবুব আলম। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে মাঠে নেমেছে। পুরো ইজতেমার মাঠে ৬ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে। পাশাপাশি ইজতেমা এলাকায় ট্রাফিক জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও উন্নিত প্রযুক্তির ক্যামেরা ব্যবহার করে বিভিন্ন যানবাহনের গতিবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে। অপরদিকে র‌্যাবের একাধিক ইউনিট ইজতেমা ময়দানে কাজ করছে। বিভিন্ন বিভাগের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে পুরো ইজতেমা এলাকা নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগল্স, পুলিশ ও র‌্যাবের ষ্ট্রাইকিং ফোর্স, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, নৌ টহল, হেলিকপ্টার টহল, মুসলিল্লদের খিত্তাওয়ারী মোটরসাইকেল টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং এর জন্য ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার একটি প্রধান কন্ট্রোল রুমসহ ১২টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে পুলিশ। এছাড়াও র‌্যাব এর পক্ষ থেকে স্থল, জল ও আকাশ পথে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিশ্চিত করতে সার্বিক প্রস্তুতি সর্ম্পূণ করা হয়েছে।

ইজতেমায় আগত ২জন মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমা এখন পর্যন্ত দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে ইজতেমার ময়দানে আসার পথে বি-বাড়িয়া জেলার সড়াইল থানার দামাউড়া গ্রামের মৃত বদু মিয়ার ছেলে ইউনুস মিয়া (৬০)নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়। তিনি ইজতেমার উদ্দ্যেশে যাওয়ার পথে পূবাইলের মিরের বাজার এলাকায় এসে অসুস্থ হয়ে পরলে তার সাথীরা টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করে। ওইদিন সন্ধ্যায় ইজতেমার মাঠে রান্নার কাজে নিয়জিত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা সদরের চৌহদ্দী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে জামাল উদ্দিন (৪০) নামে আরেক মুসল্লির মৃত্যু হয়।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত কার্যক্রম: ইজতেমায় আগত দেশী-বিদেশী মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে তোরণ, নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব ও পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার, ৩১টি শৌচাগারে ৮ হাজার ৮’শ ৮৪টি টয়লেট ও ২৯৪টি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে। ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ, ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহসহ ইজতেমা চলাকালে গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে।

পানির ব্যবস্থা: ময়দানে আগত মুসল্লিদের ওজু গোসলসহ অন্যান্য কাজে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। সেজন্য পূর্বের স্থাপন করা ১৪টি গভীর নলকূপের পাশাপাশি এবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ময়দানে নতুন করে ১ হাজার ফুট গভীর ২টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

গ্যাস সংযোগ: ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে ১৪০ থেকে ১৫০ পিএসআই উচ্চচাপ সম্পন্ন গ্যাসের লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শুধু বিদেশি মেহমানদের রান্নার কাজ হয়ে থাকে।

ময়দান জুড়ে প্রায় ৫শ মাইক: আগত মুসল্লিরা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে শীর্ষ মুরব্বিদের বয়ান শুনতে পারেন সেজন্য শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক ২১২টি ছাতা মাইক এবং বিদেশি মেহমানদের বয়ান শোনার জন্য বিদেশি কামরা ও তার আশপাশে ২০০টি ইউনিসেফ (প্রতিধ্বনি প্রতিরোধক) মাইক স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের মাইকের জামাতের শীর্ষ জিম্মাদার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।

ভাসমান পন্টুন সেতু: ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা টঙ্গী-কামারপাড়া ব্রীজ থেকে আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী সংযোগ ব্রীজ পর্যন্ত তুরাগ নদে ৫টি ভাসমান পন্টুন সেতু তৈরি করেছেন। সেই সাথে বিআইডাব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে ১টি ভাসমান পন্টুন সেতু তৈরি করা হয়েছে। পন্টুন সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আগত মুসল্লিরা সহজে তুরাগ নদী পারাপার হতে পারবেন।

ফায়ার সার্ভিস: ইজতেমাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষনিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। টু-হেলার মোটর সাইকেল টহল, ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, ষ্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট, মোবাইল জেনারেটর ও প্রতি খিত্তায় ২জন ফায়ারম্যান থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এ্যাম্বুলেন্স, অগ্নি নির্বাপন গাড়ী, পানিবাহী গাড়ী, ডুবুরি ইউনিট, রেসকিউ বোর্ড, রেসকিউ গাড়ী থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের কমীর্রা সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ইজতেমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা: ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯ টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোন কারনে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব স্ব স্থানে ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪ টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে। ডেসকোর প্রায় ২শতাধিক কর্মী পালাক্রমে ২৪ ঘন্টা কর্মরত থাকবেন।

ইজতেমায় ট্রেন সার্ভিস : ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকা-টঙ্গী, ময়মনসিংহ-টঙ্গী ও টাঙ্গাইল-টঙ্গী রুটে ১৫টি অতিরিক্ত ট্রেন পরিচালিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমান। তিনি আরও বলেন শুক্রবার জুমার দিন স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। এই রুটে চলাচলরত প্রতিটি ট্রেন ইজতেমা চলাকালীন সময়ে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে যাত্রা বিরতি করবে।

ইজতেমায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প : বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সেবা দিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের পক্ষ থেকে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসব ফ্রী ক্যাম্প উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান বিশ্ব ইজতেমার দুই গ্রুপ এক হোক। এ আয়োজন পৃথিবীর অন্যকোন দেশে হয়না শুধু বাংলাদেশে হয়। বিশ্ব ইজতেমা নির্বিঘ্নে করতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। 

উল্লেখ্য, ২ ফেব্রয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের (জুবায়েরপন্থি) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। ১১ই ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে। 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত