নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউপি থেকে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৪ কি.মি রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসীরা অনিয়মের অভিযোগ করায় এলজিইডির কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করেছেন ঠিকাদার।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কারের কাজ পেয়েছে মেসার্স জামান ট্রেডার্স নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে নাসিমুল একরাম নামে এক সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি সম্পন্ন করেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রায় ৬ মাস ধরে ধীর গতিতে চলছে। পুরাতন কার্পেটিং অপসারণ না করে বালুর পরিবর্তে মাটি, তিন নাম্বার ইটের ৬ ইঞ্চি পুরাতন খোয়া, ধুলা মিশ্রিত নিম্নমানের স্থানীয় পাথর এবং পরিমাণে কম ও নিম্নমানের বিটুমি ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানানোয় উল্টো তাদের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে পুলিশী হয়ানির কথা বলেন তারা। পরে গত সোমবার রাস্তাটির কার্পেটিং শুরু করেন ঠিকাদার। কিন্তু বুধবার থেকেই হাত দিয়েই তুলে ফেলা যাচ্ছে রাস্তাটির পিচ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন কার্পেটিং ও খোয়া না সরিয়ে নিম্নমানের ইরানি বিটুমিন ব্যবহার করে সড়কটি কার্পেটিং করা হয়। সড়কটি সংস্কার কাজে বিভিন্ন স্থানে খোয়ার পরিবর্তে মাটি, নিম্নমানের পাথর ও ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত তিন নাম্বার পুরাতন ইটের বড় টুকরা ব্যবহার করা হয় । সিডিউলে সড়কটির প্রস্থ ১০ ফুট থাকলেও বাস্তবে করা হয়েছে ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুদ্দিন জানান, সড়কটি সংস্কার কাজ সঠিকভাবে না হওয়ায় শুরুতেই ঠিকাদারের নিয়োজিত লোকজনদের বাঁধা দেওয়া হয়। ওই কাজে তদারকিতে থাকা সহকারী উপসহকারী প্রকৌশলীকে (এসও) জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মামুন ইসলাম জানান, ঠিকাদার রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। কার্পেটিং করার দুদিন না পেরুতেই হাত দিয়ে তুলে ফেলা যাচ্ছে। রাস্তার সংস্কার কাজে বালুর পরিবর্তে মাটি, নিম্নমানের ইট ও বিটুমিন ব্যবহার করার প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের লোকজন এলাকাবাসীর উপর চড়াও হয়।
আবদুল কাইয়ুম নামে এক ভ্যান চালক বলেন, রাস্তায় এমনভাবে কার্পেটিং করছে ব্রেক ধরলেই চাকার সাথে উঠে আসছে কালো পাথর (বিটুমিন মিশ্রিত পাথর)।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, রাস্তা সংস্কার করা অংশে ইতোমধ্যে ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও হাত দিলেই উঠে আসছে কার্পেটিং, মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড করে রাখলেই গর্ত হয়ে যাচ্ছে স্ট্যান্ড করা অংশ। পুরো রাস্তার কয়েকটি অংশ ফেটে এবং ভেঙ্গে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাব- ঠিকাদার নাসিমুল একরাম জানান, সিডিউলে (দরপত্র) উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী কাজ করানো হচ্ছে। তাপমাত্রার কারণে পিচ জমাট বাঁধতে সময় লাগছে। এছাড়া অফিসের লোকজন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। অফিসারদের অনুপস্থিতিতে কোন কাজ করা হয়না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, কাজে তো অনিয়ম আছেই। এ জন্য কি আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে মারামারি করবো? অনিয়মের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। তারা নির্দেশনা দিলে আমরা পদক্ষেপ নেব।
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ হাসান বলেন, নিয়ম বর্হিভুত কাজ করে থাকলে অবশ্যই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইতোমধ্যেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।