কলেজে আদায় করা অতিরিক্ত ফি থেকে ডিসি, এডিসি, ইউএনও এবং ট্যাগ অফিসারদের সম্মানী পাঠাতে হবে’প্রশাসনকে নিয়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের সরকারি রসিক চন্দ্র (আরসি) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের। এ নিয়ে একাধিকবার ভাইরাল হলেন তিনি।
সোমবার (২৫ জুন) দুপুর আনুমানিক ১টায় ডিগ্রি ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষায় প্রবেশপত্র বাবদ অধ্যক্ষ ৫০০ টাকা চাইলে, জবাবে শিক্ষার্থী বলেন- আমি যদি ৫০০ টাকা দিয়ে এডমিট কার্ড না নিতে পারি? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, সেটা তোমার বিষয়, শিক্ষার্থী বলেন, যাদের অ্যাবিলিটি নেই? জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, যারা গরিব তারা দিয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার পোলা দিয়ে গেছে, যারা ধনী, সামর্থ্যবান তারা যুদ্ধ করে প্রিন্সিপালকে কীভাবে হেনস্তা করা যায়, তুমি যে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করো, আমি ছাত্র থাকা অবস্থায় কল্পনাও করতে পারি নাই, তুমি গরিব হলে কোথা থেকে, আমার ওপর দায় চাপায়, আমার বেতনের টাকা দিয়ে তোমাদের দেনা-পাওনা শোধ করতে পারব না, আমার তো সংসার আছে।
আমারে ২১ দিনের ট্রেনিংয়ে নিয়ে আমারে ৫৩ হাজার টাকা দিয়েছে, আমার খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। এখান থেকে ডিসি, ইউএনও এবং ট্যাগ অফিসারদের সম্মানী পাঠাতে হবে। তার এমন কথায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিতর্কিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রদের শান্ত করেন। পরবর্তীতে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি ইয়াছিনুল হক এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে কলেজে যান।
শিক্ষার্থী এবং কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র আসাদ বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অযোগ্য এবং অদক্ষ। তিনি বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ে তিনি ডিসি, এডিসি, ইউএনওদের সম্মাননা পাঠান। তিনি কলেজের গাছ ও পুকুরের মাছ ভোগ করেছেন। কলেজের প্রভাষক এসএ শাহীন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রিন্সিপাল পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ফ্রি করে দেন। সব শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র ফ্রি গ্রহণ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, তিনি ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে চরহোগলা ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর উঠান বৈঠকে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, পঙ্কজ নাথের মনোনয়ন শেখ হাসিনার হাতে না এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে কী যাবে না তার সঙ্গে জড়িত।
পঙ্কজ নাথকে মনোনয়ন না দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানহানি করে বক্তব্য দেওয়ায় ওই উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করেছেন উপজেলার কাজিরহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল জেলা পরিষদ সদস্য জিল্লুর রহমান মিয়া। এ ছাড়াও অবৈধভাবে নিয়োগ লাভ, কলেজের ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ, কলেজের পুকুর অবৈধভাবে ভোগদখল, বিনা টেন্ডার এবং বনবিভাগের অনুমতি না নিয়ে কলেজের পুরোনো লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নিয়েছেন বিতর্কিত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম।
কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে একাধিক নোটিশ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্তে প্রমাণিত প্রতিবেদন দিয়েছেন, তবুও অদৃশ্য শক্তির বলে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে বহাল তবিয়তে।
বাবু/এস