শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
বিনামূল্যে মাটি নিয়ে বিপাকে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪, ১১:৪৫ AM
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে মাটি নিয়ে বিপাকে পরেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। 

জানা যায়, ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প স্থাপনের প্রয়োজনে চার বছর আগে ভূপৃষ্ঠের বহু গভীর থেকে বিপুল পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা হয়েছিল। পরে সেই মাটি ঈশ্বরদীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। 

ওই মাটি দিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ভরাট করা হয় পৌর স্টেডিয়াম, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, ডোবা, নালাসহ বিভিন্ন স্থান। বর্তমানে সেই মাটিই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। এসব মাটি পাথরের মতো শক্ত হয়ে এমন রূপ ধারণ করেছে যে, ভরাট করা স্থানগুলোতে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।    

পৌর স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, গোটা মাঠ যেন পাথরের আস্তরে ঢাকা। মাঠের চারপাশে স্তূপ করা মাটিও যেন শক্ত পাথরে পরিণত হয়েছে। ঈশ্বরদী পৌর স্টেডিয়ামের ৬ দশমিক ৫৪ একর জায়গাজুড়ে ২০২০ সালে দুই ফুট উঁচু করে প্রায় সাড়ে ৪০০ ট্রাক মাটি ফেলা হয়। 

বর্তমানে সে মাটি পাথরের মতো শক্ত হয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে, এখন তা অপসারণ না করা পর্যন্ত স্টেডিয়ামের মাঠ ব্যবহার উপযোগী হবে না। কারণ এ মাটিতে কোনো ঘাস হচ্ছে না। একইভাবে উপজেলার আবুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, সরকারি এসএম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খাল, বিভিন্ন ডোবা, নালা ও রাস্তার পাশে ফেলা মাটি নিয়েও বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

ঈশ্বরদী ক্রিকেট একাডেমির কোচ মারুফ হোসেন বলেন, গত চার বছর ধরে স্টেডিয়ামে খেলা হয় না। ঈশ্বরদী ব্যাডমিন্টন একাডেমির সভাপতি মাসুম পারভেজ কল্লোল বলেন, স্টেডিয়ামের মাঠের মাটি এতই শক্ত যে, এখানে এবারও কোনো খেলার আয়োজন করা যায়নি। 

স্টেডিয়াম সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ‘পাথর’ অপসারণ করে তার ওপরে নতুন করে এক ফুট পুরু করে স্বাভাবিক মাটি ফেলা হলে তবেই আবার ঘাস জন্মাতে পারে। এ জন্য পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু তহবিলে টাকা নেই বলে পৌর কর্তৃপক্ষ স্টেডিয়ামকে এভাবেই ফেলে রেখেছে বছরের পর বছর। 

বাঘইলের আবুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুল বলেন, আমাদের স্কুল মাঠ ও ঈদগাহ মাঠ রাস্তা থেকে অনেক নিচু ছিল। তাই রূপপুর প্রকল্প থেকে বিনামূল্যে পাওয়া মাটি ফেলে মাঠ ভরাট করা হয়। কিন্তু এখন সেই মাটি শক্ত হয়ে পাথরের রূপ ধারণ করেছে। এই মাঠে খালি পায়ে খেলাধুলা করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। 

অরণকোলা গ্রামের সাহাবুল আলম বলেন, বিনা পয়সায় মাটি পেয়ে আমার বাড়ির পাশের নিচু জায়গা ভরাট করেছিলাম। কিন্তু ওই মাটি শক্ত হয়ে যাওয়ায় এখন সে জায়গায় কোনো গাছ লাগানো যায় না।

রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রকল্পের কাজের প্রয়োজনে ২০২০ সালে পদ্মা নদীর বহু গভীর তলদেশ থেকে রুশ প্রকৌশলীরা এসব মাটি উত্তোলন করেছিলেন। প্রকল্প এলাকায় মাটি রাখার জায়গা না থাকার কারণে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে এই মাটি বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এফ এম মঞ্জুরুল হক বলেন, মাটিতে বালু, পলি ও কাদা কণার সংমিশ্রণ সমভাবে না থাকলে তা অন্যরূপ ধারণ করে। ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে উত্তোলিত এই মাটিতে বালু, পলিকণার পরিমাণ নেই বললেই চলে। এই মাটিতে কাদাকণার পরিমাণ বেশি থাকায় ভূপৃষ্ঠের ওপরে ফেলার পর তা পাথরের মতো শক্ত হয়েছে। 

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ জানায়, যখন ভরাট করা হয় তখন তারা বুঝতে পারেননি যে, এসব মাটি পরে শক্ত পাথরের মতো হয়ে যাবে। পৌরসভার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল বলেন, যখন আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছি, তখন আর কিছুই করার ছিল না। 

ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, স্টেডিয়াম ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে কমপক্ষে এক ফুট পুরু করে নতুন মাটি ফেলে ভরাট করার কোনো বিকল্প পথ নেই।

পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, ভুল যা হওয়ার হয়েছে। এখন নতুন করে এই স্টেডিয়াম ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায় কিনা, তা নিয়ে পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত