সুইসাইড নোটে জীবন নিয়ে হতাশামূলক নানা কথা লিখে আত্মহত্যা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদনান ফেরদৌস নামের এক শিক্ষার্থী।
(৮ অক্টোবর) রাতে মানিকগঞ্জের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরিবার ও বিভাগ সূত্র মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবার নাম ইসমাইল হোসেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, আদনান প্রথমে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। পরে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথম বর্ষে ইয়ার ড্রপ করলে আদনান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সাথে নিয়মিত ক্লাস করেন। সর্বশেষ তিনি ওই বর্ষে পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করেন। তবে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকায় বিভাগে পড়াশোনা স্থগিত করে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কথা ভেবে ৪-৫ মাস আগ থেকে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সে দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিল বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
হাতে লেখা চার পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটে আদনান লিখেছেন, 'খুব সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোন কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত কর করতে পারলাম না। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে কখনোই গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারি নাই। আজকেও হয়তো গুছিয়ে কিছু লিখতে পারবো না। শুধু দিনশেষে এইটুকুই উপলব্ধি করতে পারলাম মানুষ হিসেবে আমি ব্যার্থ।'
'এই ব্যার্থতার কারণ খুজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অতল এক গহ্বরে। আমি নিজে মানুষ হিসেবে কেমন জানি না। হয়তো অনেক খারাপ নয়তো ভালো। তবে একটা বিষয় একেবারে শিওর যে আমি আমার আশেপাশের সবার জন্য একটা বোঝা। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম কিন্তু কীসের জন্য যেন সবকিছু খাপছাড়া লাগে। কীসের অভিশাপে যে অভিশপ্ত আমি। এর উত্তর হয়তো কখনো জানা হবে না। "আমি হাত দিয়ে যা ছুই তাই দুঃখ হয়ে যায়'' এই লাইনটা আমার জন্যই লেখা।'
'সবশেষে এইটাই উপলব্ধি করতে পারলাম যে, কারও সমস্যার কারণ বা সবার বোঝা হয়ে বেচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই অনেক ভালো। জানি না মৃত্যু আমাকে সাদরে গ্রহন করবে কি না। তবুও আমি আশাবাদী। এই ছোট্ট জীবনে যদি আমার ব্যাবহারে বা আচরনে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন।'
'আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী। এই বাস্তবতা আমার দরকার নাই। এই বাস্তবতা থেকে আমি মুক্তি চাই। বাস্তবতার বেড়াজালে আর আটকে থাকতে চাই না। আমার লাশ পোস্টমর্টেম না করার জন্য অনুরোধ রইলো।'-আদনান (To Eternity)
এ বিষয়ে আদনানের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, 'আদনান দীর্ঘদিন যাবত মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তার চিকিৎসাও চলছিলো। কিন্তু গতকাল হঠাৎ সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে। এসময় তিনি সকলের নিকট সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করেন।'
আদনানের অকালমৃত্যুতে বিভাগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, 'আদনান অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাঁর বাবার অনুরোধে আমি তাকে কাউন্সিল করতাম। আজ হঠাৎ তাঁর মৃত্যু সংবাদে আমরা ট্যুরিজম পরিবার খুবই মর্মাহত। তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি।'