দক্ষিণ বঙ্গের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নকল্পে জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির প্রধান কার্যালয়ে গত ২৭ আগস্টে হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আদালতে দায়ের করা মামলায় আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় আসামিগণ প্রকাশ্যে ও গোপনে বৈঠক করে সংস্থার প্রধান কার্যালয়সহ ফরিদপুর জেলায় অবস্থিত ৩৫টি শাখায় হামলা, লুট ও ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লুট ও ডাকাতির আতঙ্কে ব্যহত হচ্ছে ওই এনজিওর সকল সেবা কার্যক্রম। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে সংস্থার মুন্সী বাজার শাখায় ২টি জানালার গ্রিল কেটে অফিসে ঢুকে ২টি আলমারী ভেঙ্গে নগদ অর্থ সহ মূল্যবান ডকুমেন্টস লুট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালাউদ্দিন ইবনে কুদ্দুস জানান, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। এই সরকারকে ব্যর্থ করা ও রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার জন্য পরাজিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা নানাবিধ অপকৌশল অবলম্বন করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরে কতিপয় কিছু সন্ত্রাসী দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নকল্পে জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতি দখল, লুটতরাজ ও চাঁদাবাজির জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে গত ২৭/০৮/২০২৪ইং তারিখে অফিস ঘেরাও করে হামলা চালায়।
সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত ৮,১০জন কর্মী উক্ত হামলায় সম্পৃক্ত ছিলো বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ফরিদপুরের কুখ্যাত হেলমেট বাহিনীর অন্যতম নেতা রাজিবের বাবা ৬নং ওয়ার্ড (কবিরপুর) আওয়ামীলীগ সভাপতি কুদ্দুস মোল্লার নেতৃত্বে শ্যামল কুমার বিশ্বাস, এচহাক সরদার, রনি মোল্লা, পাপিয়া আমিন, মোঃ সাইফুল আলম, কাজী শহিদুল ইসলাম ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন সহ বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসীদের নিয়ে সংস্থার প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে অফিস দখল করার চেষ্টা করে।
এ সময় সন্ত্রাসী কুদ্দুস মোল্লা সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের বুকে ছুরি ধরে তাকে জিম্মি করে কুদ্দুস মোল্লা এর নির্দেশে শ্যামল কুমার বিশ্বাস ইডির ড্রয়ার থেকে আলমারির চাবি নিয়ে সংস্থার চেক বের করে ৫০ লক্ষ টাকার অঙ্কিত চেকের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করে।
এ সময় সংস্থা হতে সেনা বাহিনীকে ফোন করলে সন্ত্রাসীরা তাৎক্ষনিক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় এচহাক সরদার সিসিটিভির ফুটেজ খুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বাদী হয়ে গত ০১/০৯/২০২৪ইং তারিখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, ফরিদপুর এর দ্রুত বিচার আদালতে ২০০২ এর ৪ ও ৫ ধারায় মামলা করেন।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি কোতয়ালী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কোতয়ালী থানার এসআই আরাফাত মামলাটি তদন্ত করে ৮ জনকে সনাক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বিজ্ঞ আদালত ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। এ মামলায় পুলিশ এপর্যন্ত ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
বাকি আসামিরা মিলে সংস্থার ৩৫টি শাখায় হামলা, লুট ও ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছে। তিনি আরও জানান, ২৭ শে আগষ্টের পর ১ ও ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে আরো বৃহৎ আকারে সংস্থার আলীপুরস্থ প্রধান কার্যালয়ে হামলা করার চেষ্টা করলে আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রচেষ্টায় কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও সন্ত্রাসীরা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অব্যাহতভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মীগণ পরিবার পরিজন নিয়ে যানমালের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
৩৫ টি শাখায় হামলা, লুট ও ডাকাতি করার পরিকল্পনার বিষয়ে অভিযুক্ত আসামিদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের বাড়ীতে পাওয়া যায়নি এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।