অচলাবস্থার মধ্যেই কর্মস্থল ত্যাগ করলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হযরত আলী।
আজ সোমবার সকালে তিনি খুলনা ছেড়ে ঢাকায় যান বলে কুয়েটের একজন সিনিয়র ডিনকে মোবাইলে জানিয়েছেন। বিষয়টি জানতে কুয়েট ভিসির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সাংবাদিকদের কল রিসিভ না করলেও শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ আছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
গত ৪ মে থেকে কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন শুরু করেন কুয়েটের শিক্ষকরা। প্রথমে সাত দিনের আলটিমেটাম দিলে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে শেষ হয়। এরপর ১৮ ও ১৯ ফেব্রয়ারি শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানানোর পর সোমবার দ্বিতীয় দফায় ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে ভিসি দপ্তরের সামনে সোমবার দুপুর ১২টায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে। যার অংশ হিসেবে আজ সোমবার দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন হয় এবং এসময় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ভিসির সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও জানতে পারেন তিনি খুলনায় নেই।
পরে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, ‘যেহেতু ভিসিকে পাওয়া যায়নি সেহেতু মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়ে অচলাবস্থা নিরসনের আহবান জানাচ্ছি। এর মধ্যে শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছি। ক্লাসে ফেরার জন্য শিক্ষকরা উদগ্রীব। কুয়েটের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ছাত্ররাও আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। কিন্তু এরপরেও শিক্ষকদের দাবি পূরণে কেন দেরি হচ্ছে ? কর্মবিরতির সপ্তম দিন পার করে ৮ম দিনে পড়লো সোমবার। এখনও কেন কুয়েট প্রশাসন নিশ্চুপ’ এমন প্রশ্নও ওই শিক্ষক নেতার। বর্তমান অচলাবস্থার জন্য তিনি কুয়েট প্রশাসনকেই দায়ী করেন। কুয়েটের রেজিষ্ট্রারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভিসি ঢাকা থেকে কুয়েটে আসবেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তবে অফিসিয়াল কোন পত্র এখনও পাওয়া যায়নি। এমনকি ভিসি অস্থায়ীভাবে কার ওপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সেটিও জানা যায়নি।
তবে কুয়েটের বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রোববার ভিসি আমাকে মোবাইলে জানান যে, তিনি ঢাকায় যাবেন। ভিসি বলেন, রূপসা সেতু পার হচ্ছেন। মঙ্গলবার (২০ মে) তিনি খুলনা ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন। যদিও আমার ওপর দায়িত্ব অর্পনের কোন কাগজ পাইনি’।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবার দেখবো। এর মধ্যে সংকট নিরসন না হলে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে’।
শিক্ষকদের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত হয়ে কুয়েটের ১৯ ব্যচের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দ্রত ক্লাস শুরুর দাবি জানাই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সববেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা ১৯ ব্যচের শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে আমাদের দু’টি পরীক্ষা আটকে আছে। এক হাজার শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়ছে। আর এক হাজার শিক্ষার্থী মানে এক হাজার পরিবার’।
কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের আমলে গঠিত তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে অটল। এ সম্পর্কে আপনাদের কি মত ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘আমরা নতুন কমিটির পক্ষে নই। তাহলে আরও পিছিয়ে যাবে। আমরা চাই বর্তমান কমিটিই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দ্রত অচলাবস্থার অবসান করুক’।
কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সোমবার কোন কর্মসূচি পালিত হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতিতে তারাও অনেকটা মর্মাহত। এজন্য সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলতে রাজী হননি বিগত প্রায় তিন মাস ধরে আন্দোলন করে আসা কুয়েটের শিক্ষার্থীরা।