২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার)।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এই মামলায় অভিযুক্ত অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। উল্লেখ্য, সাবেক আইজিপি মামুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) দায়ের করা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার সম্প্রসারণ: প্রথম দিকে শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি থাকলেও, চলতি বছরের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়।
যুক্তিতর্ক ও সাজা দাবি: তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়, যা ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
গত ১০ জুলাই এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। গত ১ জুন প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছিল। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মোট পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়:
১. উসকানি: গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান।
২. মারণাস্ত্র ব্যবহার: হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান।
৩. হত্যা (রংপুর): রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।
৪. হত্যা (চানখাঁরপুল): রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা।
৫. লাশ পোড়ানো: আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।