শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠ জুড়ে কেবল চোখে পড়ছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। পৌষের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল।
চারদিকে সরিষা ফুলে ফুলে ও গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠগুলো। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ছয়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। কখনো সবুজ, কখনো সোনালি, কখনো বা হলুদ। এমনি ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এক পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়ছে সকল ফসলের মাঠ।
এই শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সাজে। কৃষকে মুখে মুখে এখন শুধু একই কথা আমরা আশাবাদী এইবছর সরিযা ফলন ভালো হবে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এবার ফলন ভালো হবে বলে অনেকটা আশা কৃষকের। সংসারের প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের জোগানের পাশাপাশি লাভজনক বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। এ ছাড়া বর্তমান বাজারে সরিষার দাম ভালো থাকায় তারা যথেষ্ট খুশি।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এমন সুন্দর দৃশ্য। কৃষকেরা মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রত্যেক চাষিরই ভালো মুনাফা হবে। চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগই ফুল এসে গেছে এদিকে চলমান ঘন কুয়াশা বেশি দিন স্থায়ী হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে শীতের স্থায়ীত্ব কমে আসলে আবাদে কোনো প্রভাব পড়বে না।
সরিষা রোপনের মাত্র ৭৫-৮৫ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ করা যায় বলে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের জালালপুর এলাকার সরিষা চাষি বাবু হরিদাস সাহা জানায়, দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে উন্নত জাতগুলো ফলন বেশি হয়। গত বছরের চেয়ে সরিষা আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করি লাভও ভালোই পাওয়া যাবো। আমি ৩বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালা থাকলে ফসল ঘরে তুলতে পারবো।
ইছাপুর ইউনিয়নের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ৭৫-৮৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। আমন ধান কেটে জমিতে বীজ ছড়িয়ে দিলেই সরিষা হয়ে যায়। লাগেনা সেচও। সরিষা উত্তোলন করে বোরো আবাদের মৌসুম ধরা যায়। সরিষা পাতা মাটিতে ঝরে পরে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। সরিষা আবাদের পর জমিতে বোরো ধান আবাদে সারের পরিমান খুবই কম লাগে। বলা যায়, ধান চাষের খরচের অনেকটাই কমিয়ে দেয় সরিষা ফলনে।
-বাবু/এ.এস