শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
কষ্টে দিন কাটাচ্ছে নেত্রকোনার শীতলপাটি শিল্পীরা
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা
প্রকাশ: সোমবার, ৮ মে, ২০২৩, ১১:১৯ AM
জেলার ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটিকে বিশ্বের নির্বস্তক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ২০১৭ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই সারাদেশে কদর বেড়েছে শীতল পাটির। একটা সময় ছিল বাঙালির রোজকার জীবনে শীতল পরশ বোলানো শীতল পাটির চাহিদা ছিল সবার ওপরে।

তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঁচামালের ঊর্ধ্বমুখী দাম, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের জৈনপুর গ্রামের কুটির শিল্পীরা। বাঙালির প্রাণ ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে শীতল পাটিকে রক্ষা করা উচিত। তবে অভাব অনটন এবং নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চার শ’ বছরের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখছেন পাইট্যাল পাড়ার পাটি শিল্পীরা।

জৈনপুর গ্রামে বহু আগে থকেইে শতভাগ শিল্পী পাটি বানানোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সুনিপন হাতের ছোঁয়ায় প্রতিদিনই শীতল পাটি বানাচ্ছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিমাণ কমে এখন ১৫ থেকে ২০ ভাগ শিল্পী ধরে রেখেছেন এই পেশা। শীতল পাটি তৈরির প্রধান কাচামাল এই অঞ্চলে না থাকায় সদূর নেত্রকোনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়ে আসতে হয়। শীতল পাটিতে বসে বা শুয়ে যে আরামপ্রদায়ী শীতল অনুভূতি পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করা যায় না। শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের আসনে শীতল পাটির ব্যবহার কমে আসছে।

এক জন শীতলপাটি শিল্পী জানান, বহু আগে থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত থেকে পরিবারের যাবতীয় চাহিদা মিটিয়ে আসছি। বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হলে ও পরিচয়কে জানতে হলে এর বিকাশ বাড়াতে হবে। এই অঞ্চলের মানুষ বংশ পরম্পরায় এই পেশাকে ধরে রেখেছে অভাব অনটনের মধ্য দিয়েও। বাজারে এখন শীতল পাটির চাহিদা নেই বললেই চলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের রুচির এবং এখন আর এতে আগ্রহ নেই বললেই চলে। শহরের মানুষের সেকেলে ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগ্রহ না থাকায় কমে এসেছে এর চাহিদা এবং ফুরিয়ে গেছে কদর।

পাটিকর জাবেদ জানান, দুই আঁটি মোতরা ছেঁটে সরু করে বিভিন্ন আকারের বেতি বানিয়ে পাটি তৈরি হয় একটি পাটি। ২০০ টাকায় কিনতে হয় দুই আঁটি মোতরা। এতে করে প্রতিটি পাটি তৈরিতে খরচ হয় ৩৫০-৪০০ টাকা। যা বাজারে বিক্রি করে ৫০ টাকার অধিক মুনাফা অর্জন করতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা আসেনি এখানে।

পাটিকর রানী বালা জানান, স্বামীকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এই কাজ করে আসছি। পরিবারের যাবতীয় চাহিদা এর মাধ্যমেই পূরণ হয়ে থাকে। তবে সবকিছু মিলিয়ে লাভের মুখ এখন আর আসছে না। ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসাবে শীতল পাটির স্বীকৃতি আছে। একটা সময় ছিল যখন বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই বিক্রি হয়ে যেতো এছাড়া বিভিন্ন জেলার মানুষ অর্ডার দিয়ে যেতো। কিন্তু বর্তমানে ভিন্ন চিত্র, বাজারে নিয়ে গেলেও ক্রেতা সমাগম নেই বললেই চলে। পাটি তৈরির সময় বিভিন্ন জায়াগা থেকে ভিড় জমাতো এখানে। তবে এই চিত্র এখন বহু পুরনো।

নেত্রকোনা জেলার এই শিল্প এবং ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি সংগঠন। এইসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, বহু আগে থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের একটি বিশাল অংশ এই শীতল পাটি তৈরি করে আসছিল। কিন্তু নানাবিধ কারণে পাটিকরদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্পের ঐতিহ্য। সকালের কাকা ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো জৈনপুর পাইট্যাল পাড়ার নারী পুরুষের পাটি বানানোর কর্মব্যস্ততা। এখন আর এই চিত্র নেই বললেই চলে। এবং এই অঞ্চলের সুনাম এখন অনেকাংশে কমে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে রুচির, তাই শীতল পাটির জৌলস কমে এসেছে। প্রশাসন এবং সকলের মিলিত উদ্যোগই পারে এই ঐতিহ্যের ধারবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, এই অঞ্চলে শীতল পাটির কাঁচামাল নেই। উদ্যোক্তাদের নেত্রকোনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অধিক দামে কাঁচামাল কিনে আনতে হয়। কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে এই অঞ্চলেই কাঁচামাল চাষের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। পাটি শিল্প এই অঞ্চলের চারদিকে আরও ছড়িয়ে পড়ে সেই লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবোর্চ্চ সহযোগিতা করা হবে।

বাবু/জেএম 


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  শীতলপাটি  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত