রংপুর-৩ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন একই দলের বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর মাইর দেখছেন? আমার অ্যাটেতো (এখানে) ৮-৯টা লোক আছি, ভোট কইরবার লাগছি (নির্বাচন করছি)। আর রংপুরোত বোলে (রংপুর-৩ আসন) একনা না দুকনা (এক-দুইজন) মানুষ করতেছে, তাও আমাদের মতন মানুষ নোয়ায়। আমি যদি এই রকম একটা সিটে ইলেকশন করতাম, খোদার কসম আমি ইলেকশন করতাম না। ফেলে দিয়ে চলে যাইতাম। মুই না করো উয়ার (তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী) সাথে ইলেকশন। মুই মানুষের সাথে কইরবার চাও (নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা)।’ এসময় তার কর্মী-সমর্থকরা উচ্চস্বরে হিজড়া-হিজড়া বলে জানান দেন।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চওড়ারহাট এলাকায় নির্বাচনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটির ১ থেকে ৮ নং ওয়ার্ড) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টি তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পথসভায় জাপা চেয়ারম্যান ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে রাঙ্গা বলেন, ‘আল্লাহ তাদের (তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী) সৃষ্টি করছে। সৃষ্টিকর্তার দোষ ধরিনা। তার কি খেলা আছে, আল্লাহ্ জানে। আমি তো জানি না। কিন্তু আমাদের তো একটা মানসম্মান আছে। মুই (আমি) যদি এলা (এখানে) তোমারগুল্যার মতন (আপনাদের মতো) দশটা মানুষের সাথে না বসিয়া ওইরকম মানুষের সাথে (তৃতীয় লিঙ্গের) বসনু হয়, তাইলে (তাহলে) কেমন হইল হয় (হতো)।’
এর আগে পার্টি থেকে নিজের বহিষ্কারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার কি দোষ? জাতীয় পার্টির দুইবারের মহাসচিব ছিলাম। কোনো কথাবার্তা নাই মোক (আমাকে) বিদায় (বহিষ্কার) করি দিলে, এটা কি বাপের চাকরি নাকি? নিজের পাইস্যা (টাকা) দিয়্যা (দিয়ে) দল করছি, কাদের সাহেব কি করছে? মসিউর রহমান রাঙ্গা ও এরশাদ সাহেবকে সবাই চিনতো। কোনদিন কাদের সাহেবের কথা কেউ শুনেন নাই। কোন কথাবার্তা নাই মোক (আমাকে) দল বিদায় করি দিলে।’
এসময় তিনি বলেন, আমি পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি, ইচ্ছে করলেই ট্রাক দিয়ে উনার (জিএম কাদেরের) ঢাকার অফিস হোক আর রংপুরের অফিস হোক উড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ ছ্যাপ ফেলবার (থুথু ফেলার) আগে দেইখপার (দেখা) লাগে ছ্যাপটা কোথায় ফেলছি। কারণ উপরে থুথু ফেললে গায়েই পড়ে। ওই লোকের বিরুদ্ধে কিছু কইলেও পড়ে।’
এসময় পথসভায় তার পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটি কর্পোরেশনের আংশিক) আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির আরেক নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু (কেটলি প্রতীক)। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন পার্টির বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা (ট্রাক)। এর ফলে আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ে সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা।
এই আসনে ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৬ জন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন এ আসন থেকে। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। এ আসন থেকে ২০০৮ সালে এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলুসহ ৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়বেন।