<
সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১ আশ্বিন ১৪৩১
সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কমলা হ্যারিস ও ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাশা
অলোক আচার্য
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪, ৪:১০ PM
মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমাবেশে গুলি, জো বাইডেনের প্রার্থীহিসেবে সরে দাঁড়ানো, কমলা হ্যারিসের নির্বাচনে প্রবেশ ইত্যাদি ঘটনাগুলো এবারের মার্কিন নির্বাচনকে আগের নির্বাচন থেকে আলাদা করেছে। 

বিগত বারের নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর জনগণের উগ্র আচরণও ছিল ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এখন নির্বাচন হচ্ছে সম্ভবত ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিস। কারণ ইতিমধ্যেই কমলা হ্যারিসের প্রার্থীতার ব্যাপারেই শক্ত সমর্থন পাওয়া গেছে। তাঁর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। সেটা দেশে এবং দেশের বাইরেও।

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপেও বাড়ছে কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা। বাইডেন পিছিয়ে থাকলেও কয়েকটি জরিপে কমলা হ্যারিস পেছনে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। রয়টার্স/ইপসোসের সর্বশেষ জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে গেছেন কমলা। আগের দিন গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার এই জরিপ চালানো হয়। যেখানে কমলার প্রতি ৪৪ শতাংশ এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। 

গত রোববার বাইডেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তার আগে গত সপ্তাহের সর্বশেষ জনমত জরিপে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে এই ২ পয়েন্টেই পিছিয়ে ছিলেন। এর আগে ১৫ ও ১৬ জুলাই রয়টার্স/ইপসোসের এক জরিপে কমলা এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪৪ শতাংশ ভোটার জনসমর্থন জানিয়েছিলেন। তার আগে ১ ও ২ জুলাইয়ের জরিপে ট্রাম্প কমলার চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। 

জনমত জরিপে কমলার প্রতি এভাবে সমর্থন বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় ট্রাম্পের নির্বাচনি শিবির থেকে বলা হয়, ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নতুন প্রার্থী হিসেবে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমগুলো কমলাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করছে। যে কারণে খুব সম্ভবত সাময়িকভাবে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে বলে মত তাদের। ৮১ বছর বয়সে সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচনে নতুন মোড় নিয়েছে। অন্তত বয়সের ব্যবধানও কমেছে। যা নিয়েও বিতর্ক কম ছিল না।  

নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মনে করেন, ৫৯ বছর বয়সি কমলা হ্যারিস ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানসিকভাবে দক্ষ ও সক্ষম’। যেখানে ৪৯ শতাংশ মনে করেন, ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্পের এই সক্ষমতা আছে। বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে পিছিয়ে থাকার পর থেকেই নিজ দল এবং সমালোচকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। বাইডেনের উপর থেকে একের পর এক সমর্থন উঠতে থাকে এবং নির্বাচনে সরে দাঁড়ানোর চাপ আসতে শুরু করে। যদিও এসব প্রশ্ন উড়িয়ে বাইডেন ঘোষণা করেন তিনি নির্বাচন পর্যন্ত লড়ে যাবেন। কিন্তু একদিকে নির্ভার ট্রাম্প বনাম বাইডেন এর মধ্যেকার লড়াই যেন ঠিকঠাক জমছে না। নিজ দলের নেতা ও অর্থদাতাদের অনেকেউ বাইডেনের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়। তারপরেই ঘটে গুলির ঘটনা। এবং বাইডেনের অসুস্থ হওয়ার খবর। 

এরপর নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ ট্রাম্পের সাথে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল বাইডেনের। এবার সেখানে থাকবেন সম্ভবত কমলা হ্যারিস। দলকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন তিনি। কমলা হ্যারিস সমর্থন পেয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করে বারাক ওবামা আরও লেখেন, ‘আমাদেও দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি যেন নভেম্বরের নির্বাচনে জিততে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমরা সবকিছুই করব। আশা করব তিনিও শিগগির আমাদের (মার্কিন প্রেসিডেন্টের তালিকায়) সঙ্গে যুক্ত হবেন।’ 

কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করে বারাক ওবামা আরও লেখেন, ‘আমাদের দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি যেন নভেম্বরের নির্বাচনে জিততে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমরা সবকিছুই করব। আশা করব তিনিও শিগগির আমাদের (মার্কিন প্রেসিডেন্টের তালিকায়) সঙ্গে যুক্ত হবেন।’ জেদের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান, সে সুযোগ থাকবে, তবে কেউ সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন, তা মনে হয় না। 

নভেম্বরের নির্বাচনে কমলা জয়ী হতে পারেন, এটি তার প্রথম কারণ। একদিকে তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ে বিপুল উৎসাহ সঞ্চারে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর নাম প্রস্তাবের প্রথম এক দিনের মধ্যে মাঠপর্যায়ের নিয়মিত দলীয় সমর্থকদের চাঁদা থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার তোলা সম্ভব হয়েছে। ধনী দাতাদের কাছ থেকে আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার দিক থেকেও কমতি নেই কমলা হ্যারিসের। তিনি একজন সাবেক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গতবার ট্রাম্পের বিপক্ষে দাঁড়ানোর অনেক জায়গা ছিল। কিন্তু এবার যেহেতু তিনি ক্ষমতায় নেই ফলে পরিস্থিতি সেরকম হবে না। তবে ট্রাম্প হয়তো তার জায়গায় অনড় রয়েছেন।  

প্রার্থী বদলের ঘটনাও নতুন নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন উদাহরণ রয়েছে। ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন এবং জিতে যান ডেলিগেটদের ভোটে। ১৯৬৮ সালেও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনকে চাপের মুখে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। 

১৯৭৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির নেতা রোনাল্ড রিগান ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তবে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন রিগান। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে সীমান্ত বন্ধ করে দেবেন এবং অনেক অভিবাসী ফেরত পাঠাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অপরাধের বিরুদ্ধে লড়বেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশি পণ্যে কর আরোপ, ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানাসহ বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি বাস্তবায়ন করবেন বলেও উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচন ছিল এক ঐতিহাসিক নির্বাচন। 

গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়, নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে বিলম্ব করা এবং একদল উগ্র মানুষের ক্যাপিটাল হিলে হামলা, ভাঙচুর করা এসবই নির্বাচনের পরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এরপরেও বিভিন্ন সময় ট্রাম্পের মন্তব্য, তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ প্রভৃতি কারণেও আলোচনায় ছিলেন তিনি। নতুন প্রার্থীর সাথে মাঝে মধ্যেই কথার লড়াই শুরু হয়েছে।  

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক কারণে শরণার্থীর সংকট একটি বড় ধরনের সমস্যা। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা নমনীয় হলেও প্রথম থেকে ইসরাইলকে ভালোভাবেই সমর্থন দিয়ে গেছেন বাইডেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস দু’জনেই যুদ্ধ সমাপ্তি অথবা একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই এর একটি দ্রুততম গ্রহণযোগ্য সমাধান করতে পারে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলো ইসরাইল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নির্বাচনে রাশিয়ার সাথে যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে। ট্রাম্পের মার্কিন মসনদের ক্ষমতায় আসা যেন বেশ নাটকীয়। ধনকুবের ব্যবসায়ী থেকে রীতিমতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জলবায়ু থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, অভিবাসী ইস্যু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একের পর এক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার সময়েই চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ লেগে ছিল এ পরাশক্তির। শুল্ক এবং পাল্টা শুল্ক আরোপের ভেতর দিয়েই গেছে বছরের পুরোটা সময়ই। 

বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র যে বিশে^ একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তা স্পষ্ট। এবার লড়াই হবে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বাইডেনের সাথে যেন নানা কারণে প্রতিদ্বন্দ্বীতা জমছিল না। এবার সে জায়গায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখোমুখি হতে হবে ট্রাম্পকে। কমলা হ্যারিস কী পারবেন ডেমোক্র্যাটদের ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে? 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত