একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক রূপান্তরে এক বিস্ময়কর সময় অতিক্রম করেছে। আর তার স্বীকৃতি রয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়, বরেণ্য ব্যক্তিদের বক্তব্যে, গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে, এমডিজি, এসডিজি অর্জনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তির স্বীকৃতিতে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির আকার ছিল (জিডিপির ডলার মূল্যে) ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে (বেড়েছে চার গুণ)। মাথাপিছু আয় ছিল ২০০৯-১০-এ ৭৮০ মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২-এ উন্নীত হয়েছে দুই হাজার ৬৮৭ মার্কিন ডলারে (৩.৪৪ গুণ)।
এর আগে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হতেই সময় লেগেছিল দুই দশক। ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫৪ শতাংশ, নব্বইয়ের দশকে ৪.৭১ শতাংশ, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ৫.৫৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দশকে তা উন্নীত হয়েছে গড়ে ৬.৭৬ শতাংশ। ২০১০-এ মধ্যম দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫ শতাংশ, যা ২০২০-২১-এ কমে হয়েছে ২৮.৭ শতাংশ। চরম দারিদ্র্য ছিল ১৭.৫ শতাংশ, তা নেমে এসেছে ৫.৬ শতাংশে, এক দশকে কমেছে ১২ শতাংশ পয়েন্ট। ২০০৯-১০ অর্থবছরে শিক্ষার হার ছিল ৫৮.৬ শতাংশ। প্রায় এক দশকে শিক্ষার হার বেড়ে হয়েছে ৭৪.৪ শতাংশ। প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৬৭.৭ বছর, ২০২১-২২-এ তা উন্নীত হয়েছে ৭২.৪ বছরে। এক লাখ সন্তান জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ২১৬ থেকে নেমে এসেছে ১৫৬ জনে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির চলতি মূল্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম এবং ক্রয় সমতার মূল্যে ২৫তম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে গত দশকে।
ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের (১৫ মার্চ ২০২১) প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ৫০ বছরে অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে বিভিন্ন ফ্রন্টে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে। ব্লুমবার্গ ম্যাগাজিন (৫ জুন ২০২১) শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশের উত্থান হচ্ছে (বাংলাদেশ ইজ অন দ্য রাইজ)’ এবং ভারত ও পাকিস্তানের তাতে নজর দেওয়া উচিত। টাইমস অব ইন্ডিয়া (৩০ মার্চ ২০২১) শিরোনাম দিয়েছে বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের অর্থনীতির এই রূপান্তর বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের অভাবিতপূর্ব এই উন্নয়ন উল্লম্ফনের মূল কারণগুলো বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয়বারের মতো ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত হয় প্রথমবারের মতো রূপকল্প ২০২১ (ভিশন ২০২১)। এরই আলোকে প্রণীত হয় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১)। এই দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প দলিলের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিকল্পনাজগতে মৌল পরিবর্তন (প্যারাডাইম শিফট) ঘটে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে বাংলাদেশ মাইলফলক কী কী অভীষ্ট অর্জন করবে, তা উল্লিখিত হয়। যেমন—মাথাপিছু আয় ২০২১ সালে দুই হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, ২০১৩-১৪ সালের মধ্যে চালে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেন্ডারসমতা অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার, প্রবৃদ্ধির হার ২০১৫ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশের ওপর অর্জন। বলা হয়েছে, দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে (ষষ্ঠ ২০১১-২০১৫ ও সপ্তম ২০১৬-২০২০) এসব মাইলফলক অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কর্মসূচি সন্নিবেশিত করে তৈরি হবে। সেভাবেই যথাসময়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প দলিলের সব মাইলফলক শুধু অর্জিতই হয়নি, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লিখিত অভীষ্টের লক্ষ্য অর্জন ছাড়িয়ে যায়।
প্রবৃদ্ধির নতুন চলকের সন্ধানেএর পরই প্রণীত হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫, যা প্রণয়নের ভিত্তি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় রূপকল্প দলিল ২০৪১; যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। স্মরণ করা যায়, প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় শতবর্ষী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে (বক্ষ্যমাণ নিবন্ধকার গত দশকব্যাপী উল্লিখিত এসব স্বপ্ন দলিল ও পরিকল্পনা প্রণয়নে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়েছেন)। গত দেড় যুগে বাংলাদেশ এগিয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক। এই পরিকল্পনাগুলোর মধ্য দিয়েই ‘এক নয়া জাতীয় পরিকল্পনা যুগের সূচনা হয়’।
রূপকল্প দলিল ও তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো জাতীয় সত্তাতাড়িত, দেশজ বাস্তবতা ধারণ করে জাতীয় নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রণীত। আশির দশকের কাঠামোগত সমন্বয়, নব্বইয়ের দশকের ওয়াশিংটন ঐকমত্য, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের পিআরএসপির উন্নয়ন অভীষ্টবিহীন দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয় দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের জনতুষ্টিবাদী অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞায় যোগাযোগ অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন নয়া প্রবৃদ্ধি যুগের সূচনা করে। প্রবৃদ্ধির প্রভাবক মূলসূচকগুলো ছিল, যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ও বহুমুখী বাজার সম্প্রসারণ, সেবা ও শিল্প খাতের দ্রুত বিকাশ, অব্যাহত রপ্তানি ও প্রবাস আয়।
অব্যাহত এই প্রবৃদ্ধির যাত্রায় প্রথম বিপত্তি ঘটায় ২০২০ সালের শুরুতে কভিডের বিস্তার। অবাধ জনচলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ে। দেশের অভ্যন্তরে সব খাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। সাহসী ব্যাপক প্রণোদনা কার্যক্রম চালাতে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়াতে হয় প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। আর্থিক শৃঙ্খলার ওপর প্রথম চাপ আসে, যা ছিল অভাবিতপূর্ব। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে আগের বছরের ৮.১৫ থেকে ৩.৪৫ শতাংশে। কভিডকালে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সৃষ্ট দেশব্যাপী অবকাঠামো ও সম্প্রসারিত বাজারব্যবস্থার কার্যকারিতায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৬.৯৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.১ শতাংশ, যা ছিল উন্নত অর্থনীতিগুলো তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন।
এই পুনরুত্থানকালেই আসে নতুন বিপত্তি, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ে। জ্বালানি তেল ও সমগ্র বাণিজ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি অত্যধিক বেড়ে যায়, যার ফলে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি পরিবাহিত হয়। আমদানি সংকুচিত করতে হয়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে হয়। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোতে নীতি সুদহার নজিরবিহীনভাবে বাড়ানো হয়। মূল্যস্ফীতি ও নীতি সুদহার বৃদ্ধির কবলে পড়ে বাংলাদেশের টাকার বড় রকমের মূল্যমান কমাতে হয় (২৮ শতাংশ টাকার মান কমে যায়)। উন্নত অর্থনীতির উচ্চ নীতি সুদহার, টাকার অবমূল্যায়নে বর্ধিত আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে রিজার্ভ সংকটের সূত্রপাত ঘটে। বিনিয়োগ সংকুচিত হয়। অর্থনীতির এমন টালমাটাল অবস্থায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসে ৫.৭৮ শতাংশে। কভিড সংকট-উত্তর প্রবৃদ্ধি পুনরুত্থানকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সংকুচিত মুদ্রা সরবরাহনীতি, বেসরকারি বিনিয়োগে মন্থরতা, জাতীয় নির্বাচনোত্তর প্রায় সারা দেশে দলগত অন্তঃকলহ ও সহিংসতায় উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব, কৃষিতে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির নিম্নহার, বিদেশি বিনিয়োগ কম আসা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার গড় স্বাভাবিক ধারায় (অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রক্ষেপিত সাড়ে ৮ শতাংশ) কবে ফিরবে? আমাদের অর্থনীতির আবার কবে পুনরুত্থান ঘটবে?
জনসমর্থিত নতুন সরকার যাত্রা শুরু করেছে। আন্তর্দলীয় রাজনৈতিক হারাকিরি নেই। ছোট-বড় সব অর্থনীতিই ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়াস চালাচ্ছে। ফেডারেল নীতি সুদহার এখন কমানোর কথা হচ্ছে। প্রধান অর্থনীতিগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতির অবনতি থেমেছে। মুদ্রাপাচারের বিষয়গুলোতে বিএফআইইউ দৃশ্যমান সক্রিয়। এখন সমাজে আশা-জাগানিয়া প্রশ্ন, আবার প্রবৃদ্ধির উচ্চগামিতা কিভাবে অর্জন করা যায়? প্রবৃদ্ধি অর্জনে রপ্তানি ও প্রবাস আয় ইতিবাচক ধারায় থাকলেও প্রবৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে সাড়ে ৬, ৭ ও ৮ শতাংশে উন্নীত করতে নতুন চলকের সন্ধানে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। দেশে নিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, আমদানিতে চাপ কমানোর জন্য কৃষির অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তথাপি এ খাতের প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নমুখী। ২০০৯-১০-এ কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.১৫ শতাংশ, ২০১৪-১৫-তে ৩.৩ শতাংশ এবং ২০২২-২৩-এ ২.৬১ শতাংশ।
কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হলে বাণিজ্যিক কৃষিই একমাত্র পথ। প্রায় ৯০ শতাংশ ছোট জোত-জমা এবং প্রান্তিক চাষি। বাজার উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ তাঁদের কম। ব্যাপক রপ্তানি উদ্বৃত্ত উৎপাদন তাঁদের দ্বারা সম্ভব নয়। আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল কৃষিতে সরবরাহ অনিশ্চয়তা কাটানো, উচ্চ প্রযুক্তি গ্রহণ ও বাণিজ্যিক কৃষি প্রান্তিক চাষি দিয়ে সম্ভব নয়। স্কেল ইকোনমি (বৃহৎ আকৃতির সুবিধাবঞ্চিত) তাঁদের প্রতিকূলে। তাই খামার জোত-জমা বড় করার নীতি গ্রহণ (উদার ভূমিনীতিতে যেতে হবে), ফসল উৎপাদন প্লাস্টিক হাউস/গ্রিনহাউসে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন কৃষি-ব্যবসার দ্রুত প্রসারণ। রপ্তানি বহুমুখীকরণে সবাই একমত, তবে নীতি সংস্কার সেভাবে হচ্ছে না। আমরা মোট প্রায় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ পণ্য রপ্তানি করি। সাকল্যে রপ্তানির ৮৪ শতাংশ আসে শুধু গার্মেন্টস পণ্য থেকে। বলা হয়, ১৭০টি দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করি, যা সাকল্যে এক বিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি। এক বিলিয়নের ওপর পণ্য রপ্তানি করি হাতে গোনা দু-তিনটি আইটেম। পণ্য রপ্তানির বড় বাধা আমাদের ট্যারিফ হার। অর্থনীতিবিদদের বহু পরামর্শ সত্ত্বেও আমাদের গড় ট্যারিফ হার এখনো ২৮ শতাংশ, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গড় ১৪ শতাংশ। আমাদের রপ্তানিকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে, রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হলে দ্রুত ট্যারিফ বা রপ্তানি কর যুক্তিযুক্ত করা প্রয়োজন। উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা না থাকলে দেশীয় পণ্য বলেই সংরক্ষণের নীতি পরিহার করা অতি-আবশ্যক।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়াতে হলে বাজারজাত সব পণ্য এখন হতে হবে আন্তর্জাতিক মান ও গুণ সম্পন্ন এবং সেসব পরিবেশবান্ধবভাবে উৎপাদন করতে হবে। সব পণ্য বাজার এবং সরবরাহ চেইনের সব স্তরে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। শ্রমবাজারকেও দক্ষ ও প্রযুক্তি সহায়ক হতে যথাযথ বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের প্রবৃদ্ধির অন্যতম চলক প্রবাস আয় বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে প্রত্যেকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়। বাজার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। বাজার কার্যক্রম পরিচালনা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নির্মোহভাবে আইনের শাসন প্রয়োজন। ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রবাস আয়ের মতোই আউটসোর্সিং আয় কর্মসংস্থান ও আমাদের বৈদেশিক আয় বাড়াতে পারে। আউটসোর্সিং আয় হতে পারে আগামী দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধির অন্যতম চলক। পৃথিবীর আউটসোর্সারদের মধ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ১৫ শতাংশ এবং এ থেকে আয় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। এসবই হতে হবে সমন্বিত পরিকল্পনামাফিক, যা প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২৬-২০৩০)।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক পরিকল্পনা কমিশন সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়