সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় অবিলম্বে পৃথক আইন প্রণয়নের পাশাপাশি জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সেই সাথে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
গত ১৮ মে সংগঠনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে নবনির্বাচিত ৯১ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং ৫৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির সদস্যদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি শহিদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি কাজী মুকুল এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়। কার্যনির্বাহী কমিটির বিদায়ী সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে সভাপতি ঘোষণা করে ৫৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হয়েছে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘দেশে সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষায় সরকারের কর্মসূচি পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছি। সরকার যদি তা করতে না পারে, তবে আমরাই সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করব।’
কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘নির্মূল কমিটিকে পরিচালনা করতে গিয়ে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। উচ্চ পর্যায় থেকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে আমাদের। আমাদের পরিত্যাজ্য করার একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। অথচ সরকার যখন বিপদে পড়ে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে শাহরিয়ার কবিরকে অনুরোধ জানায় তাদের পক্ষে যেন বিবৃতি দেয়।’
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন রয়েছে। বাংলাদেশে যদিও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তবে তাদের তেমন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আমরা এখনো সরকারের কাছে বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংখ্যালঘু কমিশনের দাবি জানাই। সরকার যদি না পারে, তবে আমরা নিজেরাই এ কমিশন গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেব।’
নবনির্বাচিত সভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘সমাজে যেকোনো অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আমরা পদের দাবিদার না। নিজের লাভের জন্য কারও দরজায় দরজায় ঘুরি না। আমরা সেই কাজটি করি যাতে সমাজ উপকৃত হয়।’
নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করতে একাত্তরের ১১ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নামে পৃথক তরুণ বিগ্রেড গঠন করা হয়েছে৷ নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পাঠদান কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় কিন্তু আলামতের অভাবে তারা অনেক সময় সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। আমরা নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটি গঠন করেছি, যাতে ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যর্থতার কারণে ভিকটিমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ রসূল বলেন, একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র এবং নথিপত্রগুলোকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করার দাবি নিয়ে কাজ করবে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় পরিষদ। অনলাইনে সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিদ্বেষের বিস্তার ঘটছে। নানাভাবে সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। অথচ উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রকৃত অর্থে তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অনলাইনেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জবাব দিতে হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কান্তি বল বলেন, ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটি কাজ করছে। আগামীতে জেলায় জেলায় আইন সহায়ক কমিটি তৃণমূল পর্যায়ে নির্যাতিত মানুষকে আইনি সহযোগিতা প্রদান করবে।’
নতুন কমিটির কার্যনির্বাহী
সদস্য সাদমান সৌমিক সরকার বলেন, ‘যে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নাম শুনে বড় হওয়া, তাঁর হাতে গড়া সংগঠন এ কাজ করতে পারার সুযোগ পাওয়া, আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। যে অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে আমাদের সংগ্রাম, সেটি সফল হোক। বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করার সংকল্প নিয়ে সকলের সাথে কাজ করতে চাই।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী আবুল বারক আলভী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, মানবাধিকার নেতা কাজল দেবনাথ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূ-তত্ত্ববিদ মো. মকবুল-এ ইলাহী চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালি, বিভাগীয় সম্পাদক সাংবাদিক হারুন আর রশিদ, সহসাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসমাত জাহান, ছাত্রনেতা পলাশ সরকার, ছাত্রনেতা আশেক মাহমুদ সোহান।
আরও উপস্থিত ছিলেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, ছাত্রনেতা অপূর্ব চক্রবর্তী, অর্থ সম্পাদক লেখক আলী আকবর টাবি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক শরীফ নুরজাহান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক চলচ্চিত্রনির্মাতা পিন্টু সাহা, পাঠাগার সম্পাদক সমাজকর্মী হাসনাত আব্দুল্লাহ বিপ্লব, সহ-প্রচার সম্পাদক চলচ্চিত্রনির্মাতা সাইফ উদ্দিন রুবেল, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাংবাদিক সুশীল মালাকার, প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক সাংবাদিক আবু সালেহ রণিসহ আরও অনেকে।